স্টাফ রিপোর্টার:
রাজশাহীতে একজন ফেরিওয়ালাকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সূত্র ধরে অপহরণকারী চক্রের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেখানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্রসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরের বোয়ালিয়া থানার হেতেমখাঁ এলাকার মো. আরেফিন আহাদ খান ওরফে সানি (৪২), মো. মোস্তাক আহম্মেদ ওরফে ফাহিম (২২) ও মো. পারভেজ (২৭) এবং নগরের চন্দ্রিমা থানার মেহেরচণ্ডী কড়াইতলা এলাকার মো. সাব্বির সরকার (২৫)। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, দেলোয়ার হোসেন মণ্ডল নামের এক ফেরিওয়ালা শহরে ফেরি করে শিশুদের খেলনা বিক্রি করতেন। ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরের রাজারহাতা এলাকার লোকনাথ মার্কেটের সামনে থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে তাঁকে নগরের হেতেমখাঁ বড় মসজিদের উত্তর পাশে একটি দোতলা বাসার ছাদের একটি টর্চার সেলে আটকে রাখা হয়। বাসাটি গ্রেপ্তার আরেফিনের নিজস্ব বাসভবন।
পুলিশ জানায়, আসামিরা ফেরিওয়ালা দেলোয়ারকে অপহরণ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং মারধর করেন। এরপর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরদিন দুপুরে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেরিওয়ালা প্রথমে বিষয়টি কাউকে জানাতে চাননি। পরে মৌখিক অভিযোগ ও তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই টর্চার সেলে অভিযান চালায়। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাকের নেতৃত্বে উপপুলিশ কমিশনার মো. আল মামুন, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ, পরিদর্শক মো. আশিক ইকবাল, উপপরিদর্শক সুমন কুমার সাহা, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল, সিআরটি ও বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল ভোরে অভিযানে যায়। পুলিশ প্রথমে আরেফিনকে তাঁর শোবার ঘর থেকে আটক করে। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির ছাদের টর্চার সেল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে আরেফিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ দাবি করছে, আসামিরা দীর্ঘ দিন ধরে সহজ-সরল মানুষকে দেশি অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করে ওই টর্চার সেলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। তাঁরা মুঠোফোনে অপহৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে নগদ এবং বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মুক্তিপণ ও চাঁদা হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। তাঁরা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, অপহরণ ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা দুটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার