স্টাফ রিপোর্টার:
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না।’
আজ শনিবার বিকেলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ জনসভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না, তো সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। যাঁরা ওই দলকে বড় দল বলেন, তাঁরা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন–সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে দলগুলো আছে, জামায়াত এরা কারা?
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল, সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানে একটি কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোট ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকি সবগুলো আসন। তাহলে এই দুই দল একপর্যায়ের হয় কীভাবে।’
বিএনপির সময়কার সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫০০ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন। বিএনপি মানুষকে কিছু দেয়নি বরং মানুষের অর্থকরী সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেরা নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না, যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন। খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে (তারেক রহমান) দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ বক্তব্য দেন। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ ও স্থানীয় নেতারা।
দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় জনতা। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন।
৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন
এদিকে সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং অপর ৫টি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে আছে পাইপলাইনে পানি সরবরাহের দুটি গ্রামীণ প্রকল্প। এর একটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে এবং অপরটি কোটালীপাড়া উপজেলার রামশিল ইউনিয়নে। গোপালপুর ইউপি অফিস-কাজুলিয়া ইউপি ভায়া বোরাইহাটি পোলশাইর বাজার সড়কে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ ও কুশলি জিসি-ধারাবাশাইল জিসি ভায়া মিত্রাডাঙ্গা সড়কে ৯৯ মিটার গার্ডার ব্রিজ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোনাখালী সড়ক, কোটালীপাড়ায় চারতলাবিশিষ্ট শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের তিনতলাবিশিষ্ট গার্লস হোস্টেল (১০০ শয্যা), কোটালীপাড়া এসএন ইনস্টিটিউটের চারতলাবিশিষ্ট শিক্ষা ভবন, কোটালীপাড়া পৌর কিচেন মার্কেট ও কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, কোটালীপাড়া উপজেলার ভাঙ্গারহাট তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয়ে শেখ রাসেল লাইব্রেরি, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক বাড়িতে ‘মুক্তমঞ্চ’, কোটালীপাড়ার উত্তর কোটালীপাড়া রামমোহন উচ্চবিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় বাজারে একতলা বাণিজ্যিক ভবনকে ১০ তলায় উন্নীতকরণ ভবনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী গণপূর্ত বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কমপ্লেক্স ভবন ও কোটালীপাড়া মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন ভাঙ্গারহাট বাজার উন্নয়ন ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ম্যুরাল নির্মাণ এবং কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের আওতায় ১১টি ইউনিয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রকল্প উদ্বোধনের পর এগুলো গোপালগঞ্জবাসীর জন্য তাঁর সরকারের উপহার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের অভিযান অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের সন্তানেরা যেন কোনো মাদক বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়, এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
পদ্মা সেতু নির্মাণের সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ঢাকা থেকে স্টিমারে বা লঞ্চে গোপালগঞ্জ–টুঙ্গিপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য করতে আসিনি, জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি নই।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার