স্টাফ রিপোর্টার:
প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন। সারি সারি চোখ জুড়ানো অট্টালিকায় ঘেরা এলাকাটি ঢাকার গুলশানের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সেকারণে সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে অন্যতম আসনটি হচ্ছে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার)।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মরহুম আবদুর রহিম অ্যাডভোকেট। ১৯৭৯ সালে ২য় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মরহুম লুৎফর রহমান এ আসনে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সনে সৈয়দ মকবুল হোসেন (স্বতন্ত্র) ও ১৯৮৮ সনে জাতীয় পার্টির গৌছ উদ্দিন এমপি-সহ এ আসনটি দু’যুগ ব্যাপি বিএনপি, জাপা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে।
১৯৯১ সালে নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা-৩৩,৩৩২ ভোট) ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপা প্রার্থী শরফুদ্দিন খসরু’র (লাঙ্গল-৩৯,০৬৫ ভোট) নিকট পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা-৫৩,৯৬৫ ভোট)। নাহিদের এ বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দু’যুগ পর আসনটি ফিরে পায় আ’ লীগ। নিকটতম প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির মুজম্মিল আলী (লাঙ্গল: ৩৪,৬৯১)। এরপর ২০০১ সালে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হন নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হয় আ’লীগের। নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র এমপি সৈয়দ মকবুল হোসেন।
পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট প্রার্থী জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানকে হারিয়ে মহাজোটের নৌকার প্রার্থী হিসেবে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরবর্তী ২০১৪ সনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ও ২০১৮ সনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নুরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি নির্বাচিত হন ও দু’মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাণ্ডলীর সদস্য। তাঁর শিক্ষামন্ত্রীর মেয়াদে দেশে প্রথমবারের মতো একটি শিক্ষানীতি প্রণীত হয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ আসনের নির্বাচনে ৭ বার অংশগ্রহণ করে ৪ বার বিজয়ী হন। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শমসের মুবিন চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি-সোনালী আঁশ), সেলিম উদ্দিন (জাতীয় পার্টি-লাঙ্গল), সরোয়ার হোসেন(স্বতন্ত্র-ঈগল), সাদিকুর রহমান (ইসলামী ঐক্যজোট-মিনার), আতাউর রহমান (সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট-ছড়ি)।
এদিকে ক্লিন ইমেইজের রাজনীতিবিদ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম উদ্দিন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনও (স্বতন্ত্র) ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তাঁর দাবি, ২০০৮ সাল থেকে এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে আছি। মন্ত্রী-এমপি না হওয়া সত্ত্বেও এলাকার মানুষ আমাকে মূল্যায়ন করে ঋণী করে রেখেছেন। শেষ জীবনটা তাদের পাশেই থাকতে চাই।
এদিকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দলীয় প্রতীক (সোনালী আঁশ) নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসনে বিকল্প ধারা থেকে প্রার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে জোটের মনোনীত আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। এবার নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে শমসের মুবিন চৌধুরী শতভাগ আশাবাদি (যদিও ভোটের মাঠে দৃশ্যমান অবস্থান নেই)। তবে দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনের গোলাপগঞ্জ উপজেলার একক প্রার্থী তিনি। পক্ষান্তরে নৌকা প্রতীকসহ ৩ প্রার্থী বিয়ানীবাজার উপজেলার অধিবাসী। নির্বাচন বিশ্লেশকদের মতে, ভৌগলিক সুবিধা ও আঞ্চলিকতার চমকে কুটনৈতিক শমসের মবিন চৌধুরীর তেলেসমাতি ছোট করে দেখার উপায় নেই। তাই অনেকেই এ নির্বাচনকে ১৯৮৬ সনের (নৌকা প্রার্থী ছিলেন এডভোকেট আব্দুর রহিম) নির্বাচনের সাথে চলতি ইলেকশনের তুলনা করছেন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন প্রচারবিহীন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বিয়ানীবাজার উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও বারোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা সিলেট-৬ (২৩৪ নং আসন)। এই আসনে মোট ভোটার ৪,৭০,৫১৯ জন। তন্মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২০৩১৫৫ জন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২৬৭৩৬৪ জন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার