এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
হযরত মোহাম্মদ (স:) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি অভাবে থাকিলে তাহাকে সাহায্য সহযোগিতা করিলে, কিয়ামতের কঠিন বিপদের দিন নাযাতের ওসিলা হয়ে এই সহযোগীতাটি কাজে লাগবে। হযরত মোহাম্মদ (স:) আরও বলেন” মৃত্যুর পূর্বে যাবতীয় ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করলে, সে কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” কারণ এ ঋণ মাফ করার সামর্থ স্বয়ং আল্লাহর ও নেই। উদাহরণ হিসাবে বলতে চাই, হযরত মোহাম্মদ (স:) এর জীবদ্দশায় এক সাহাবী মৃত্যুবরণ করলেন। হযরত মোহাম্মদ (স:) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি জানাযায় শরিক হবেন? নবীজী উত্তর দিলেন, তাহার জানাযায় তিনি শরিক হবেন না। কারণ তাহার প্রচুর ঋণ আছে। যখন অন্য সাহাবী তাহার যাবতীয় ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলেন, তখন নবীজী ঐ সাহাবীর জানাযায় শারিক হলেন। কি কঠিন শাস্তি? সুতরাং জীবদ্দশায় জানামতে সমস্ত ঋণ পরিশোধ করা একান্ত কর্তব্য। নতুবা জাহান্নাম অবধারিত। কারন কখন কাহার মৃত্যু আসবে তা কিন্তু বলা যায় না। ঋণ মুক্ত থাকার চেষ্টা করা প্রতিটি মুমিনের জন্য ফরজ। কারন এ ঋনের জন্য অনন্ত কাল পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে নিজেকেই। ঋনের দায় দায়িত্ব কিন্তু বেশীর ভাগ উত্তরাধীকারীগন নিতে চায় না। আর নিবেই বা কেন? সুস্থ মস্তিষ্কে ঋণগ্রহন করলেন। যেহেতু ঋণ পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক তা জেনেও পরিশোধ করলেন না, সেহেতু কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকেই।
সুতরাং জ্ঞান বুদ্ধি থাকতে অন্যের প্রাপ্য হক থেকে নিজে দায় মুক্তি নিন। কারন মৃত্যুদূত কখন আপনাকে ডাক দিবেন তা তো আর বলা যায় না।
ঋণগ্রহীতা ক্ষমতার বাহাদুরীর কারনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার পথে। এ কাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই বেশী জড়িত। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম থেকে জানা যায়, ঋণ খেলাপিদের সর্বোচ্চ তালিকায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলোঃ বেক্সিমকো গ্রæপ, এস. আলম গ্রæপ, সামিট গ্রæপ, যমুনা গ্রæপ, সিকদার গ্রæপ, প্রমুখ। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে যে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহন করে, তা যথা সময়ে ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠান গুলোকে দেউলিয়া করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতমঃ ইসলামী ব্যাংক লি:, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লি:, গেøাবাল ইসলামী ব্যাংক লি:, ন্যাশনাল ব্যাংক লি:, আই.এফ.আই.সি ব্যাংক লি:। এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকগন চরম হতাশাগ্র্রস্থ। কেহ প্রভাব খাটিয়ে ৫ হাজার ১০ হাজার, বিশ হাজার, ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঋন নিয়েছেন। কিন্তু ফেরত দেননি। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মধারগর্নের পারিবারিক জীবন মোটেও সুখকর নহে।
এদিকে গরিব সম্প্রদায়ের কেহ ১০ হাজার বা ২০ হাজার টাকা ঋণ নিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে থাকেন। কিন্তু কোটিপতিদের বেলায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তবে আল্লাহর বিচার থেকে কেহ রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। যেমনঃ করনাকালীন সময়ে এসব শিল্পপতিদের কেহ অক্সিজেনের অভাবে আবার কেহ পারিবারিক অসহযোগীতার কারনে করুন মৃত্যু হয়েছে। এ থেকে কি শিল্পপতিরা শিক্ষা নিতে পারেন না? জেনে রাখা ভাল, একজন পথচারী দিন মঞ্জুর ভিক্ষুকের শরিরে যতটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে, ঠিক আপনি প্রভাবশালীর শরিরে ও তো এর বেশী হওয়ার কথা নহে। প্রভাবশালী ব্যক্তি রাত্রে ঘুমাতে হলে ঔষধ সেবন করে ঘুমাতে হয়। কিন্তু হতদরিদ্র ব্যক্তি বা ভিক্ষুক গাছ তলায় ঘুমালেও তার কিন্তু টেনশন মুক্ত ও আরামদায়ক ঘুম হয়। ঘুমানোর সময় চিন্তা করে দেখুন এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন হয়ত জীবনের শেষ ঘুম। পর দিন মৃত্যুবরন করলেন। মৃত্যুর সাথে আপনজনরা হয় ২/৪ ঘন্টা পাশে থাকতে পারেন। পরবর্তীতে সবাই চলে যাবেন। কিন্তু কবরের জিন্দেগীতে দুনিয়ার বিশাল সম্পত্তি কোন কাজে আসবে না। কিন্তু দুনিয়াবি ঋণ অক্ষরে অক্ষরে হিসাব করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। নেকির-মুনকির আল্লাহর দরবারে জীবদ্দশায় কি কি অন্যায় করেছেন তার কিন্ত বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন। দুনিয়াবি জীবনে প্রভাব খাটিয়ে বা ঘোষ দিয়ে কাউকে শায়েস্তা করেছেন। কিন্ত পরকালের জিন্দেগীতে কি এসব প্রভাব খাটানোর সুযোগ আছে? না, সেখানে এ ধরনের অনৈতিক প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। আপনি হয়ত মৃত্যুর পূর্বে চেষ্টা করে দেখতে পারেন, বেশী দিন বাচার জন্য হযরত আজরাইল (আঃ) কে ঘোষ দিয়ে বাচার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু হযরত আজরাইল (আঃ) ও নেকির-মুনকিররা কি ঘোষ গ্রহন করবেন? না, কিছুতেই না। রাস্তার ফকিরকে যেভাবে সাড়ে তিন হাত কবরে সমাহিত করা হবে, তদ্রæপ আপনি শিল্পপতিকে ও সেভাবে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। সময় থাকতে অন্যের হক বুঝিয়ে দেন। ঋণমুক্ত ঘোষমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সচেতন হউন। সমাজে ব্যাভিচার, অন্যায় অবিচারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন। কারণ দুনিয়াবি জীবন মাত্র কিছুদিন। কিন্তু পরকালের জিন্দেগী অনন্তকাল। উদাহরন হিসাবে বলতে চাই, আপনি চুরি, চামারী করে দুনিয়ার জমিনে রাজকীয় প্রাসাদ তৈরী করলেন। আল্লাহ্্ চাইলে, মৃত্যুর পর আপনাকে জীবিত করে সে প্রাসাদে উপস্থিত করালেন। প্রাসাদের কি কেহ আপনাকে চিনবে? না, চিনবে না। বরং কঠাক্ষ করে বলবে, সে কি একটা পাগল নাকি? তখন হয়ত ১০০/১৫০ বছর হয়েছে মাত্র। সুতরাং সময় থাকতে আতœশুদ্ধির পথ অনুসরন করা প্রতিটি মুমিন বান্দার কর্তৃব্য।
লেখক, সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার