বিনোদন ডেস্ক:
দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে তৃতীয় অ্যালবাম অতৃতীয় নিয়ে এল আর্টসেল। অ্যালবামটি ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘গান’ অ্যাপে মুক্তি পেয়েছে, আগামী ৯ মার্চ স্পটিফাই, ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও প্রকাশ করা হবে।
ঢাকার গুলশানের এটিএল স্টুডিওতে অতৃতীয় নিয়ে ‘বিনোদন’-এর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট লিংকন, ড্রামার সাজু, অ্যালবামের প্রযোজক ও গিটারিস্ট জুয়েল ও লিড গিটারিস্ট ফয়সাল। দেশের বাইরে থাকায় ছিলেন না শুধু গিটারিস্ট সেজান।
‘বিনা মূল্যে’ গান শোনার এই যুগেও ৩০০ টাকায় অ্যালবামটি কিনছেন আর্টসেলের ভক্তরা…
সাজু: অ্যালবাম বিক্রি থেকে ভালো অঙ্কের অর্থ আসছে। এটা ব্যান্ডের জন্য একটা বড় চালিকাশক্তি। সিডির যুগ চলে যাওয়ার পর অ্যালবাম থেকে সে অর্থে টাকা পাওয়া যায় না। অনেকে ইউটিউব থেকে অর্থ কামাতে ভাইরাল কনটেন্ট বানায়। কিন্তু আমরা এটা করতে পারব না, আমরা ইঁদুরদৌড়ে নামতে পারব না। ইঁদুরদৌড়ে না নামলে মিলিয়ন ভিউ পাব না, অর্থও পাব না। আমাদের ভিউ সব সময় মিলিয়নের নিচে। গান অ্যাপে অ্যালবাম বিক্রির বিষয়টি আশাজাগানিয়া। ভক্তদের এমন সমর্থন প্রত্যেক ব্যান্ডকেই অনুপ্রাণিত করবে। দুই সপ্তাহ পর অ্যালবামটি বিনা মূল্যে শুনতে পাবে জেনেও আর্টসেলকে সমর্থন জোগাতে অ্যালবামটি কিনছে ফ্যানরা।
লিংকন: ‘অতৃতীয়’ নামের গভীর মর্মার্থ রয়েছে। আমরা চাই, শ্রোতারা গানগুলো শুনে নিজেদের মতো করে বুঝুক। গানের কথা, সুর কিংবা সংগীতায়োজনে অনেক ধরনের চিত্রায়ণ রয়েছে। শ্রোতারা শোনার আগেই খোলাসা করতে চাই না।
জুয়েল: পুরোটা খোলাসা না করলেও অ্যালবামের ধারণাটা একটু বলা যায়। ‘অদ্বিতীয়’ বলে একটা কিছু আছে, তবে ‘অতৃতীয়’ বলে কিছু নেই। এটি নিয়ে শ্রোতাদের চিন্তা করার জায়গা রয়েছে। কেন ‘অতৃতীয়’ বলা হচ্ছে? ২০৯১ সালের কথা চিন্তা করে অ্যালবামের গল্পটা নির্মাণ করেছি। আমরা বলতে চাচ্ছি, সেখানে মানুষের সঙ্গে হয়তো আরেকটি অ্যাডভান্স রিলাইজেশন কিংবা লাইফ ফর্মের কোনো ধরনের সংযোগ ঘটেছে। সেখান থেকে ভাবলে চিন্তার পরিধি আরও বিস্তৃত হয়। তখন অ্যালবামটি নিয়ে অনেক ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হবে।
অ্যালবামের পেছনের গল্প…
লিংকন: একটা সময় ব্যান্ডকে প্রায় গুটিয়ে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, ওই অবস্থা থেকে এই অবস্থায় আসতে জুয়েল ভাইয়ের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমাদের সঙ্গে এলেন ফয়সাল ভাই, সাজু দেশে ফিরল। ব্যান্ড গতি পেল।
সাজু: ২০১০ সালে আমি দেশের বাইরে চলে যাই। ২০১২ সালে এক মাসের জন্য দেশে ছিলাম। তখন অ্যালবামের কাজ শুরু হয়েছিল। বেঙ্গল স্টুডিওতে ড্রামস রেকর্ড করলাম, কিন্তু লিড গিটারিস্ট, লিরিসিস্টকে নিয়ে কাজ করতে পারিনি। তখন এরশাদকে পাইনি আমরা। তখন জুয়েল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। এক মাসের মধ্যে সব গানের ট্র্যাক প্রস্তুত করেছেন জুয়েল ভাই। আরও কিছু জটিলতার কারণে সেই ট্র্যাক নিয়ে কাজ করা যায়নি। আমি ও সেজান দেশের বাইরে ছিলাম, লিংকন একা একা শো করেছে। এর মাঝে ২০১৮ সালে এরশাদকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে পত্র পাঠাই। এরপর ফয়সাল ভাই আর্টসেলে আসেন। ২০২০ সালে আমি একবারে দেশে চলে আসি। তখন থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অ্যালবামটি করা হয়েছে। মিক্সিং, মাস্টারিংসহ বেশির ভাগ কাজই হয়েছে সবশেষ ছয় মাসে। একটা–দুইটা করে আমরা একক গান বের করেছি। অ্যালবামের তিনটি গান আগেই মুক্তি দিয়েছিলাম। এই গানগুলো আমরা আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছিলাম।
লিংকন: আমি, সাজু ও সেজান পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, সব সময়ই আমাদের মধ্যে বিশ্বাস, ভালোবাসা থাকে। আমরা ফয়সাল ভাই, জুয়েল ভাইয়ের মতো মানুষকে পেয়েছি। আমাদের মধ্যে একই তরঙ্গ বিরাজ করে। মেধা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে ধারাবাহিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। যখন এরশাদের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য তৈরি হয়, তখন সেটাকে পুঁজি করে আমি যদি মুখ গোমরা করে বসে থাকি, তাহলে আমাদের বিশ্বাস ও সততার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আর্টসেলই আমাদের জীবনের সব। ওই তাগিদটাই আমাকে তাড়িত করেছে। সাজু ও সেজান দেশের বাইরে থাকলেও প্রতিটা সময় তাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, আমি একাই টিকিয়ে রেখেছি আর্টসেলকে। অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্য নয়, অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাজু ও সেজানের সঙ্গে আলোচনা করে নিই। জুয়েল ভাই ও ফয়সাল ভাই এলে নির্ভার হলাম।
জুয়েল: তখন কেউ দেশে ছিল না, তখন লিংকন একা সংগ্রাম করেছে। আর যেকোনো ব্যান্ড হলে ওইখানেই বন্ধ হয়ে যেত। ব্যান্ডটিকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য লিংকনকে সাধুবাদ জানাই।
বছরের পর বছর অপেক্ষার পর আর্টসেলের অ্যালবাম না আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বিদ্রূপও করেছেন।
লিংকন: আমি প্রথম প্রথম রাগ করতাম। পরে দেখলাম, আমার দৃষ্টিপাত করাটা ঠিক হবে না। আমার কাজ করা দরকার, আমি কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। একটা পর্যায়ে ফেসবুক দেখাই বন্ধ করে দিলাম, কোনো মন্তব্যও করি না। আমি আসল ঘটনাটা জানি, আমি কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ফলে ব্যাপারটা অতটা পীড়াদায়ক হয়নি। তবে সামনাসামনি দেখা হলে অনেকে ‘ভাই, কেমন আছেন?’ বলার আগেই বলে, ‘ভাই, অ্যালবাম কবে আসবে?’ এটাকে খেলো করে দেখার কিছু নাই, এটা (অ্যালবাম) আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের বিশ্বাস, আমাদের মনন।
‘ভাই, অ্যালবাম কবে আসবে?’
আর্টসেলের ‘অনিকেত প্রান্তর’কে দেশের ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম আইকনিক গান বলা হয়। বহু গান ছাপিয়ে গানটি কেন এত জনপ্রিয়?
লিংকন: এটা এমন কোনো গান না যে এক দিনেই পছন্দ করেছেন শ্রোতারা। গানটি মানুষের কানে যেতে অনেক দিন সময় লেগেছে।
সাজু: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে গান যত আস্তে আস্তে উঠবে (জনপ্রিয়) তত আস্তে আস্তে নামবে। গানটির একেকটা বাক্যে শ্রোতারা নিজেকে খুঁজে পান। অ্যালবামের ১০ নম্বর গান অনেকে শোনেন না, আর ১৬ মিনিটের গান তো আরও শুনতে চান না। তবে এটি অনেকে শুনছেন। অনেকে বলছেন, ‘অনিকেত প্রান্তর’ গানটার মধ্য দিয়েই আর্টসেলের গান শুনতে শুরু করেছেন। তার মানে গানটার মধ্যে একটা কিছু আছে। গানটা শোনার মতো ধৈর্য বা সাহস শুরুতে অনেকেরই ছিল না। পাঁচ-ছয় বছর আগে থেকে গানটা মানুষ শোনা শুরু করেছে। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কনসার্টে গানটা গাওয়ার তেমন অনুরোধ পেতাম না। তার চেয়ে ‘স্মৃতি স্মারক’, ‘ধূসর সময়’ বেশি শুনতে চাইত শ্রোতারা। তেমনি ‘অতৃতীয়’ অ্যালবামের শেষ গান ‘অতৃতীয়’। আমাদের তৈরি করা গানের মধ্যে ‘অতৃতীয়’ মাস্টারপিস, আমি এটা বারবার বলি।
জুয়েল: আমি অনুভব করি, এটা অনেকটা সিনেমার মতো। গানটি বোঝা শুরু করলে অনেক প্রেক্ষাপট থেকে কথাগুলো বলা হচ্ছে। আর ‘অনিকেত প্রান্তর’ নিয়ে যদি বলি, তলিয়ে একটু ভাবার জায়গা আছে এই গানে। যার জন্য ভালো লাগতে সময় লেগেছে। একেকটা বাক্যে অনেকভাবে আবিষ্কার করছেন শ্রোতারা। গানটার কোনো মিউজিক ভিডিও নাই, নিজেদের মতো করে কল্পনা করার মতো জায়গা আছে।
চতুর্থ অ্যালবাম কবে আসবে?
সাজু: যেহেতু এই অ্যালবামের কাজ শেষ হয়েছে, আমরা এখন অনেকটা ফ্রি হয়েছি। এই কয়েক বছর মিউজিক্যালি খুব আপসেট ছিলাম। আমাদের নতুন গান তৈরি করতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার