স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের জৈন্তাপুরে তামাবিল-জফলং হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় চার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর মৃতুকে কেন্দ্র করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নিহাল পালের বাবা বাদী থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
ওসি বলেন, এসব মামলার তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি পরিদর্শন দল গঠন করেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলামের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দল রোববার হাসপাতাল পরিদর্শন করবে বলে অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়েছে।
এদিকে, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, শুক্রবার রাতে হামলা ও ভাঙচুরের সময় হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক হিল্লোল সাহা এবং স্টাফ আব্দুস সাত্তারকে মারধর করা হয়। ঘটনার সময় জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ডিউটিতে ছিলেন। প্রথমে দুজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল; এর ১৫ মিনিট পর আরও দুজনকে আনা হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় তাদের ইসিজিও করা হয়েছিল। পরে স্থানিয়রা নিহতদের সিলেটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন; কিন্তু চালক না থাকায় তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে তারা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে হাসপাতালের নিচতলা ও স্টাফ কোয়ার্টারে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
হামলায় একটি সরকারি জিপে আগুন ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়; এতে প্রায় ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই ওই চারজনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসায় অসহযোগিতা করা হয়েছে। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি দেওয়া হয়নি। এ সময় উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুর করে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, জৈন্তাপুর হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। তদন্তপূর্বক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুরে বাংলাবাজার ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর বায়তুল জামে মসজিদের সামনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় চার বন্ধু মারা যান। তারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয়রা বলছেন।
নিহতরা হলেন- নিহাল পাল (২৬), জুবায়ের আহমদ সাব্বির (২৬), মেহেদী হাসান তামাল (২৫), সুমন আহমদ (২৫)।
শনিবার দুপুর ২টায় জৈন্তাপুর রাজবাড়ি মাঠে উপজেলার কমলা বাড়ির জুবায়ের আহসান, বড় পুকুরপাড় পানিয়ারাহাটির মেহেদী হাসান তমাল ও জাঙ্গালহাটির আলী হোসেন সুমনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। আর বিকাল ৪টার দিকে তোয়াসিহাটিতে বাড়ির পাশে নেহাল পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 997 বার