স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম মহানগরে জাতীয় পার্টির সবশেষ বড় সমাবেশ কখন হয়েছে, তা মনে করতে পারেন না দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। গেল ১ জানুয়ারি দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছোট করে আয়োজন ছিল চকবাজারের দলীয় কার্যালয়ে। সেই সভায় নগর কমিটির ১২২ সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন না। শুধু নির্বাচন এলে কিছুটা হাঁকডাক শোনা যায় দলটির। বর্তমানে ঘরোয়া সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ দলটির কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচন নিয়েও তৎপর হয়েছেন নগর কমিটির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ ও সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব হোসেন। দুজনই প্রার্থী হতে চান এই আসন থেকে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি প্রতিটি আসনে নির্বাচন করবে, এখনই জানিয়ে দিলেন সোলায়মান আলম শেঠ। কিন্তু সে অনুযায়ী সাংগঠনিক কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়ে না।
আবার রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের দ্বন্দ্বে দ্বিধান্বিতও তৃণমূলের কর্মীরা। ফলে কর্মোদ্দীপনা চোখে পড়ে না তাঁদের মধ্যে। নগরে ১৪টি থানা কমিটি থাকলেও তা অনেক দিনের পুরোনো। সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। নেই ওয়ার্ড কমিটিও। নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয়ও চোখে পড়ে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোলায়মান আলম শেঠ এখন ঢাকায়। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় যোগ দিতে গেছেন। তা জানেন না সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব। ওই সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে তাঁকে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে, এমন দাবি করলেন শেঠ। গতকাল রোববার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানতে চাইলে সোলায়মান আলম শেঠ মুঠোফোনে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে। আমাকে চট্টগ্রাম-৮ এর উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে বলা হয়েছে।’
সোলায়মান আলম শেঠের বিরুদ্ধে দলে একনায়কোচিত তৎপরতার অভিযোগও কান পাতলে শোনা যায়। বড় কোনো অনুষ্ঠান এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম না চালানোর দায়ও তাঁকেই দিতে চান অনেক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর কমিটির এক নেতা বলেন, ‘সোলায়ামান ভাই টাকাপয়সা খরচ করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর অনুষ্ঠান করেন। সংগঠনকে মজবুত করার জন্য কোনো বড় অনুষ্ঠান তিনি করেন না। কেবল নির্বাচন এলে প্রার্থী হতে চান।’
চট্টগ্রাম-৮ আসনে শেঠকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, এমন খবরে আকাশ থেকে পড়লেন সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব হোসেন। তিনি নিজেও প্রার্থী হতে চান ওই আসন থেকে। তাঁর বাড়ি চান্দগাঁও এলাকায়। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দল থেকেও তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল বলে এয়াকুব দাবি করেন।
এয়াকুব বলেন, ‘আগে আমাকে দলের প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মহাজোটের কারণে নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। ওটাতো আমার আসন। এবারও আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।’
এয়াকুব আরও বলেন, ‘দল সারা দেশে যেভাবে চলছে চট্টগ্রামেও সেভাবে ঢিমেতালে চলছে। তবে আমরা শিগগির বড় কর্মসূচি নিয়ে আসব। নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপরতা বাড়বে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণসভায় এসেছিলেন দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রীমা কমিউনিটি সেন্টারে হওয়া সেই সভাটি ছিল বড় কোনো সভা। এর আগে একবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে একটি ছোট মানববন্ধন করা হয়েছিল। থানা পর্যায়ে শক্ত কোনো ভিত নেই দলটির।
সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, ‘আমাদের দলের কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রামেও অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু সব মিডিয়াতে আসে না আর কি। কাজ করে যাচ্ছি। আগে কিছু বাজে লোক ছিল, তাই চট্টগ্রামে সমস্যা ছিল। এখন আমরা সবাই জি এম কাদের ও ম্যাডামের (রওশন এরশাদ) সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ।’
২০১৮ সালে কমিটি সোলায়মান আলম শেঠ ও এয়াকুব হোসেন নগর কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন দলের চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বেঁচে ছিলেন। এর আগে ২০১০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন মাহজাবিন মোরশেদ।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিষয়ে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। জাতীয় সংসদেও ৩০০ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে প্রস্তুতি রাখব।’
এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘রওশন এরশাদ আমাদের বাইরে ছিলেন না। এখনো নেই বলে মনে করি। দেখা যাক কী হয়।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার