স্টাফ রিপোর্টার:
আসিফ মাহতাব; বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সপ্তম শ্রেণির বইয়ের দুটো পাতা ছিঁড়ে আলোচনায় আসা এই খণ্ডকালীন শিক্ষক সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ব্যক্তিগত ছবি ও মদের গ্লাস নিয়ে নিজের বক্তব্য দিয়েছেন। তার দাবি, ওটা মদ ছিল না, ছিল মদের গ্লাসে আপেলের জুস।
নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের পাঠ ও তার আচরণ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আসিফ মাহতাবের অভিযোগ ওই অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। তার অভিযোগ, পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারের নামে ইসলাম নিষিদ্ধ সমকামিতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে তিনি এ পাঠ্যবই থেকে ‘শরিফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেন।
এ ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল তর্ক-বিতর্ক। অনেকেই তার পক্ষ নিয়েছেন, আবার অনেকেই তার বিরোধিতাও করেছেন। এখানেই সমালোচনাকারীরা থেমে থাকেনি; আসিফ মাহতাবের ব্যক্তিজীবন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ট্রল। সেখানে তার অতীতের কিছু ছবিও পোস্ট করা হয়েছে।
একটি ছবিতে দেখা যায়, আসিফ মাহতাব হাতে মদের গ্লাস নিয়ে দুজন নারীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবিটিই যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে শিক্ষক আসিফ মাহতাব বলেন, ‘আমার হাতে যে গ্লাসগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা আসলে আপেল জুস। আপনি যদি ইউনিভার্সিটির ছবি চেক করেন, দেখবেন ওটা আমার স্কলারশিপ পাওয়ার অনুষ্ঠান। ওখানে ওয়াইনের গ্লাসে জুস দিয়েছে। আমি জীবনে অ্যালকোহল টাচ করে দেখিনি।’
সম্প্রতি এক লাইভ অনুষ্ঠানে এসে তিনি ওই ছবির বিষয়ে এসব কথা জানান।
মেয়েদের সাথে ছবি তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়া পছন্দ করি না। ছবি তোলার সময়ও দূরত্ব বজায় রাখি। আর ছবির মেয়েগুলোর মধ্যে একজন আমার বোন, আরেকজন আমার খালা।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার রাজধানীতে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আসিফ মাহতাব নামের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন এক শিক্ষক বইয়ের কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে বলেন, ‘বইয়ের দোকানে যাবেন। ৮০ টাকা দিয়ে বইটি কিনে এইযে দুইটা পাতা আছে, শরীফ-শরীফার পাতা দুটি ছিঁড়বেন। ছেঁড়ার পরে আপনারা বইটা দিয়ে বলবেন, বইটা অর্ধেক দামে বেচো।’ বইয়ের পাতা ছিঁড়ে, বই ছেঁড়ার আহবান জানানো আসিফ যে অনুষ্ঠানে ছিলেন সেটা ছিল জাতীয় শিক্ষক ফোরাম নামের একটি সংগঠনের। এরা মূলত চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন। এবং আসিফ মাহতাব যে অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 999 বার