গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টঙ্গী হাসপাতাল থেকে এক যুবক ও কালিয়াকৈরে মেয়েকে গলা কেটে করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার বাবার বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে রাত ৮টায় সৎ বাবার হাতে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় জয়দেবপুরের জামুনা গ্রামের পুকুর থেকে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার জামুনা গ্রামের মো. মুজিবুর রহমানের পুকুর থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এঘটনায় শিশুটির সৎ বাবা মো. মাহবুবকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার মাহবুব জেলার শ্রীপুর উপজেলার বাগমারা গ্রামের মো. মোস্তফা কামালের ছেলে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী মোসা. আসমা আক্তার পারুল ও সৎ ছেলে আব্দুল্লাহকে নিয়ে গাজীপুর মহানগর থানার চাপুলিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রী পারুলের অজান্তে আব্দুল্লাহকে গাজীপুরের সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার জামুনা গ্রামের মো. মুজিবুর রহমানের পুকুরে ডুবিয়ে হত্যা করে বাসায় চলে আসেন। সন্তানের খোঁজ না পেয়ে মা আসমা আক্তার পারুল তার বর্তমান স্বামী মাহাবুবকে সন্দেহ ও দোষারোপ করেন এবং গাজীপুর সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা পুলিশ মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে মাহবুব সৎ ছেলে আব্দুল্লাহকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশ সৎ বাবা মাহবুবের বর্ণনা অনুযায়ী গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার জামুনা গ্রামের মুজিবুরের পুকুর থেকে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় আব্দুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নন্দ লাল চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এবিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মেয়েকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ঘাতক বাবাও। বুধবার দুপুরে উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইয়াসমিন আক্তার বৃষ্টি (১৪) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার শিবপুর কানিপাড়া এলাকার ভুলু মণ্ডলের মেয়ে। আহত বাবা ভুলু মন্ডল (৪০) একই গ্রামের মোকলেস মণ্ডলের ছেলে।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুলু মন্ডল দীর্ঘদিন আগে তার স্ত্রী সুমা বেগম ও মেয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে গাইবান্ধা থেকে জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসেন। পরে তিনি পরিবার নিয়ে উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় তার শ্বশুর চাঁন মিয়ার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন।
কিন্তু বিয়ের পর থেকে ভুলু মন্ডল ও তার স্ত্রী দুজনের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। বুধবার দুপুরেও তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে মেয়ে বৃষ্টি মায়ের সঙ্গে তার বাবাকে ঝগড়া করতে নিষেধ করে। এতে মেয়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হন তার বাবা ভুলু মন্ডল। পরে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দেন। এ সময় তিনি বৃষ্টির গলায় ও নিজের পেটে ছুরি চালান।
বৃষ্টি চিৎকার শুরু করলে তার মামা ইমরান ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বৃষ্টির গলায় ও তার বাবার পেটে ছুরির আঘাত দেখতে পান। পরে গুরুতর আহতবস্থায় বাবা ও মেয়েকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজন ও এলাকাবাসী। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বৃষ্টিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আহত ভুলু মন্ডলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েকে গলা কেটে হত্যার পর তার বাবা ভুলু মন্ডল নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুর ১২টায় টঙ্গীর নিমতলী রেলগেট এলাকা থেকে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মৃত ওই যুবকের নাম সুজন (৩০)। সে সুনামগঞ্জ জেলার শ্রীপুর থানার কিরণপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে পুলিশে খবর পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কারখানার নিরাপত্তাকর্মী মোবারক হোসেন জানান, বুধবার দুপুরে নিমতলী রেলগেট এলাকায় কয়েকজন যুবক রেল লাইনের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ করে তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়ান। এ সময় কয়েকজন সুজনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে দ্রুত সটকে পড়েন। এতে সুজন গুরুতর আহত হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তার মৃত্যুর খবর শুনছি।
টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি রেললাইনে ঘটেছে, তাই মরদেহটি রেলওয়ে পুলিশ উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ছোটন শর্মা বলেন, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি থানা পুলিশকেও অবহিত করেছি। তবে বিবাদের কারণ ও এ ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 993 বার