আব্দুল খালিক:
সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় টিলা ও ফসলীয় জমি থেকে অবাধে মাটি কাটা চলছে। অনেকে টিলা কেটে বসত বাড়ীও নির্মাণ করছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী সঙ্গবদ্ধ চক্র অধিক টাকা কামাতে মাটি বিক্রি করতে প্রাকৃতিক টিলা কেটে সাবাড় করছে। প্রতিদিন অন্তত: শতাধিক ট্রাক ও ট্রাক্টর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত পরিবেশ বিপর্যস্থ, মানচিত্র পরিবর্তন ও গ্রামীণ সড়কগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাটি কাটতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলার প্রতন্ত এলাকায় অন্তত: ৫ জন মাটি কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কিন্ত পরিবেশ আইন এবং দুর্ঘটনা কোন কিছুই যেন টিলা ও ফসলীয় জমি মাটি কাটা রোধ করতে পারছে না।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নির্বিচারে পাহাড়ি টিলার মাটি কাটা চলতে দেখা গেছে। মাটি পরিবহনের কাজে অধিকাংশ নাম্বার প্লেট বিহীন ট্রাক ও ট্রাক্টর নিয়োজিত রয়েছে। মাটি শ্রমিকরা জানায়, এক ট্রিপ মাটি ৮ থেকে ৯ শ’ টাকায় বিক্রি হয়। অনেক ভুমি মালিক নিঁচু ভুমি ভরাটের কাজে টিলার মাটি ব্যবহার করে। ট্রিপ প্রতি শ্রমিকরা পায় ৪শ’ থেকে ৫শত’ টাকা। টিলা ও জমির মালিককেও ট্রিপ প্রতি ১৫০/২০০ টাকা দিতে হয়। বাকী টাকা ট্রাক বা ট্রাক্টর মালিক পায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর চালকরা জানায়, অধিকাংশ গাড়ীর মালিক হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের আত্মীয়-স্বজন। তারা এ মহলের যোগসাজসে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে টিলার মাটি বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে গাড়ী চালক ও মাটি শ্রমিকরা তেমন লাভবান না হলেও মাটির ব্যবসা করে সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র ও পরিবহন মালিকরাই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কমপক্ষে দেড়শ’ ট্রাক ও ট্রাক্টর বিভিন্ন পাহাড় টিলা কাটার কাজে ব্যবহ্রত হচ্ছে। মাটি বোঝাই এসব গাড়ী অনবরত একই রাস্তায় যাতায়াতের কারণে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ সড়ক জনসাধারনের চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এ যেন দেখার কেই নেই। কিছু এলাকায় বসত বাড়ী নির্মাণ করতেও অনেকে টিলা ও ফসলীয় জমি মাটি কাটছে। আলাপকালে এরা জানায় তারা আদৌ জানে না টিলা ও ফসলীয় জমি মাটি কাটা নিষিদ্ধ। সিলেটের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়-টিলা থেকে মাটি কাটার ফলে ধ্বংস হচেছ গাছপালা, ঝোঁপঝাড়, জঙ্গলসহ বনাঞ্চল। বসত হারিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পশুপাখি। এরপ্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। ফলে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচেছ প্রকৃতির ভারসাম্য, সৃষ্টি হচেছ জলাবদ্ধতা ও অকাল বন্যার।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 996 বার