ধর্ম ডেস্ক:
শবে বরাতের ফজিলত হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। এ রাতটি ফজিলতপূর্ণ। হাদিসের আলেমরা এ রাতে তাহাজ্জুদ, জিকির-আজকার, কোরআন তিলাওয়াতসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করার কথা বলেন। মহিমান্বিত এই রাতকে ঘিরে এমন কিছু আমল ও ধারণা প্রচলিত রয়েছে যা হাদিস বা পূর্ববর্তী আলেমদের যুগে পাওয়া যায়। এমন একটি প্রচলিত ধারণা হলো- শবে বরাতে ভাগ্য নির্ধারিত হওয়া।
অনেকে ভাবেন, এ রাতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মউত ও রিজিক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। হাদিস বিশারদদের মতে, এ অর্থে বর্ণিত হাদিসগুলো অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহিহ বা গ্রহণযোগ্য হাদিস বর্ণিত হয়নি।
কোরআন কারিমে মহান আল্লাহ বলেন-
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত, ৩-৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাবিয়ী ইকরিমাহ বলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শাবানের রাতকে’ বুঝানো হয়েছে। ইকরিমাহ বলেন, এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়।
মুফাস্সিরগণ ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেননি। ইমাম তাবারি বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এ ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করার পরে তার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ইকরিমার এ মত ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন যে, সঠিক মত হলো, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘লাইলাতুল কদর’-কে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ যে রাত্রিতে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন সে রাত্রিকে এক স্থানে লাইলাতুল কদর: ‘তাকদীরের রাত’ বা ‘মর্যাদার রাত’ বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যত্র এ রাত্রিকেই ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। এবং এ রাত্রিটি নিঃসন্দেহে রমজান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি রমজান মাসে কোরআন নাযিল করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রমজান মাসে, শাবান মাসে নয়। (তাবারী, তাফসীর ২৫/১০৭-১০৯)
পরবর্তী মুফাস্সিরগণ ইমাম তাবারীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’ বলতে এখানে ‘মহিমান্বিত রজনী’ বা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়েছে। তাদের মতে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল কদর’ একই রাতের দুটি উপাধি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার