মালয়েশিয়া প্রতিনিধি:
অভাবের সংসারে হাল ধরতে জমিজমা বিক্রি করে, এমনকি এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমালেও হতভাগা শ্রমিকদের অভাব পিছু ছাড়ে না। চোখে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়ে মাসের পর মাস বেকার থাকায় বাড়ছে হতাশা, ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনাও।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার একটি নির্মাণ সংস্থা ৯৩ জন বাংলাদেশিকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে দেশে নিয়ে কাজ না দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্তসহ অবশিষ্ট কোটা বাতিল করে দেশটির সরকার। এ ছাড়া কোম্পানির বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট আইনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানানো হয়।
এক যৌথ বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ও মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম বলেন, অভিযুক্ত নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে তারা কর্মসংস্থান ও পর্যাপ্ত বাসস্থান ছাড়াই বিদেশি কর্মী নিয়োগ করেছে।
তারা বলেন, নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের জন্য মৌলিক কল্যাণ মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে আশ্রয় কর্মসংস্থান ও ভরণপোষণ রয়েছে।
দুই মন্ত্রী বলেন, বিদেশি কর্মীদের দুর্দশা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা সরকারের নজরে আসে এবং পরে তদন্তসাপেক্ষে কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন বিভাগের নেতৃত্বে একটি অভিযানে সমন্বয় করেছে, যা ন্যাশনাল অ্যান্টি-ট্রাফিকিং কাউন্সিলের জাতীয় কৌশলগত অফিসের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা শ্রমিকদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে ও আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য বিদেশি শ্রমে জড়িত নিয়োগকর্তাদের সতর্ক করছি।
এদিকে দুই মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬, ব্যক্তি পাচার বিরোধী ও অভিবাসী আইন ২০০৭, কর্মসংস্থান আইন ১৯৫৫ এবং আবাসন, বাসস্থান ও কর্মচারী সুবিধার ন্যূনতম মান ৯০১ এর অধীনে আইনি ব্যবস্থাসহ ছয়টি পদক্ষেপের রূপরেখা দিয়েছে।
ন্যূনতম মানদণ্ড আবাসন, বাসস্থান ও কর্মচারী সুবিধা আইন ১৯৯০-এর অধীনে সাধারণ জরিমানার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দোষী সাব্যস্ত হলে কর্মচারীর বেতন প্রদানে অবহেলা করা ও উপযুক্ত জীবনযাপনের শর্ত পূরণ না করার কারণে অপরাধীকে প্রতিটি অপরাধের জন্য ৫০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে।
তাছাড়া নিয়োগকর্তারা শ্রম আইন ১৯৫৫ এর ধারা ৬০কে-এর অধীনে নতুন বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে কালো তালিকাভুক্ত হবে। বিদেশি কর্মীদের জন্য তাদের অবশিষ্ট কোটাও বাতিল করা হবে।
এর আগে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় আসার পর থেকে ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। অভিবাসী শ্রমিক অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হলের বরাতে এ খবর দেওয়া হয়।
অ্যান্ডি হল বলেন, শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ২১ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত নিয়োগ ফি দিয়েছে, যেখানে তাদের ভালো জীবনযাত্রার সুবিধা ও উচ্চ বেতনে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরের চেরাসের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশি কর্মীরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্মসংস্থান ও বাসস্থান না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার