জুড়ী প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পল্লী বিদ্যুতের মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, পূর্ব গোয়ালবাড়ী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতের বড়লেখা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক সোহেল রানা চৌধুরী, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল হুদা ও জুড়ী কার্যালয়ের ইনচার্জ রেজাউল করিম তালুকদার। এর মধ্যে সোহেল রানা চৌধুরীকে পবিসের সিলেটে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, আশরাফুল হুদাকে কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং রেজাউলকে বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত কর্মচারী হলেন, শিক্ষানবিশ লাইনম্যান মো. আশিক।
মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুঠোফোনে জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক একরামুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আরইবির পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটির সদস্যদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান আরইবির প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদার মুঠোফোনে বলেন, তদন্তকালে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনাস্থলে দুটি বিদ্যুৎ খুঁটির দূরত্ব বেশি। প্রায় দুই বছর আগে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সেখানে নতুন করে একটি খুঁটি স্থাপন করতে যান। কিন্তু জমির মালিকের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। পরে পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বে থাকা লোকজন বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। এতে দায়িত্বে তাঁদের অবহেলা ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব র্গোয়ালবাড়ী গ্রামে রহমত আলী নামের এক ব্যক্তির জমিতে টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া একটি ঘরে বাক্প্রতিবন্ধী দিনমজুর ফয়জুর রহমান (৫০) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ধরে থাকতেন। ফয়জুর ভূমিহীন ছিলেন। তাঁর ঘরের ওপর দিয়ে টানানো ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন ছিল।
২৬ মার্চ ভোরে বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টিতে পাশের খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ লাইনের একটি তার ছিঁড়ে ঘরটির ওপর পড়ে যায়। এতে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দরজা খুলে বাঁচার চেষ্টা চালান। এ সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলেই ফয়জুর রহমান (৫০), তাঁর স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া সুলতানা (১৪), সাবিনা আক্তার (১১) ও ছেলে সায়েম আহমদ (৭) মারা যায়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় সোনিয়াকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই দিন রাতে সে মারা যায়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুস সালাম চৌধুরীকে প্রধান করে তিন মদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সালাম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, তদন্তের সময়বৃদ্ধি করা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার