উপ-সম্পাদকীয়:
প্রতি বত্সর ঈদসহ পূজাপার্বণ ও অন্যান্য উত্সবের সময় কোনো না কোনো দুঃসংবাদ আমাদের আচ্ছন্ন করিয়া আনন্দ উত্সবকে কিছুটা হইলেও ম্লান করিয়া তোলে। এবার সেই তুলনায় ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হইয়াছে স্বস্তিদায়ক ও আনন্দঘন পরিবেশে। গতকাল পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। এই বার ঈদ যাত্রা ছিল অনেকটাই নির্বিঘ্ন। পথেঘাটে তেমন একটা বিড়ম্বনা পোহাইতে হয় নাই যাত্রীদের। যেইহেতু এই বার ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে মিডিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন পেশাজীবী তুলনামূলকভাবে অনেক দিন ছুটি ভোগ করিয়াছেন, তাই ঈদ যাত্রার শেষ মুহূর্তগুলিও হইয়াছে অনেকটাই দুর্ভোগহীন ও আনন্দময়। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা ও তত্পরতার কারণেও কোথাও কোনো বড় ধরনের অসুবিধা হয় নাই। বিচ্ছিন্নভাবে দুই-এক জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও আশা করি, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের সহিত ঈদ উদ্যাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরিয়া আসিবার সময়ও এই যাত্রা হইবে অধিকতর সুখ ও প্রীতিকর।
এই বার ঈদের পূর্বভাগে ব্যাংক ডাকাতির প্রেক্ষাপটে বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়। এই লইয়া অনেকে আতঙ্কিত ছিলেন; কিন্তু ঈদের পূর্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর বেশ কয়েক জন সদস্যকে গ্রেফতার ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করায় দেশবাসীর মনে ফিরিয়া আসে শান্তি ও স্বস্তি। এই বারের ঈদকে কেন্দ্র করিয়া অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হইয়াছে। ঈদ অর্থনীতি গ্রাম-গঞ্জের অর্থনীতিকেও করিয়াছে গতিশীল। বিদেশ হইতে যেমন বিপুল রেমিট্যান্স আসিয়াছে, তেমনি ঈদের কেনাকাটায় নিরাপত্তাগত কোনো সমস্যা না হওয়ায় ব্যবসায়ী সমাজ হইয়াছে উপকৃত ও লাভবান। যদিও রোজার শুরুতে রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের কপালে দেখা দিয়াছিল চিন্তার ভাঁজ; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা এই সংকট কাটাইয়া উঠিয়াছি। শেষের দিকে দেশের ছোট-বড় বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলি হইয়া উঠিয়াছিল আরো জমজমাট। ২ লক্ষাধিক কোটি টাকার ঈদ কিনাকাটা হইয়াছে এই বার। ঈদের তিন দিন পরই গত রবিবার সমগ্র দেশে পালিত হইল বাংলা নববর্ষ ১৪৩১। সুতরাং ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য যেমন চাঙ্গা হইয়াছে, তেমনি আমাদের আনন্দোত্সবের পরিধিও বাড়িয়া গিয়াছে।
এই বার ঈদের ছুটিতে যাহারা গ্রামাঞ্চল বা মফস্সল শহরে বেড়াইতে যান, তাহারা শেষ চৈত্রের গরমে কিছুটা কাহিল হইয়াছেন। চাহিদামতো বিদ্যুত্ না থাকায় কোথাও কোথাও পরিবার-পরিজন লইয়া তাহাদের কষ্ট বাড়িয়াছে বা এখনো তাহারা কষ্টের মধ্যে রহিয়াছেন। গতকাল হইতে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুুলিতে শুরু করিলেও অত্যধিক গরমের কারণে অনেকে দুর্ভোগ পোহাইয়াছেন। এই ক্ষেত্রে আবহাওয়ার খবর অনেকটা সুবিধাজনক নহে। গতকাল রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ রংপুর ও নীলফামারী জেলার উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়াছে মৃদু হইতে মাঝারি তাপপ্রবাহ। আগামী অন্তত পাঁচ দিন গরম আরো বাড়িতে পারে। এই দিকে দেশে গরম যেমন বাড়িতেছে, তাহার সহিত পাল্লা দিয়া বাড়িতেছে বিশ্বরাজনীতির উত্তাপ। গত রবিবার ইসরাইল ভূখণ্ডে ইরানের মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর সেই উত্তাপ আরো বাড়িয়া গিয়াছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হইবার আশঙ্কা ব্যক্ত করিতেছেন। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব বলিয়াছেন যে, বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের ভার বহন করিতে পারিবে না। এমনিতেই ইউক্রেন যুদ্ধের পর হইতে বিশ্বে বাণিজ্যিক পণ্য ও খাদ্রসামগ্রীর সাপ্লাই চেইন অনেকটা ভাঙিয়া পড়িয়াছে। ইহার জের ধরিয়া বিশ্বের দেশে দেশে দেখা দিয়াছে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। গাজা যুদ্ধ শুরু হইবার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। এখন ইরানের হামলার জের ধরিয়া যদি বিশ্বে সর্বাত্মক যুদ্ধের দামামা বাজিয়া উঠে, তাহা হইলে এই গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করিয়া আমরাও যে তাহার আঁচ পাইব, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই।
অতএব, ঈদ ও নববর্ষ আনন্দ উদ্যাপনের সময় এই শঙ্কাটাও মর্মপীড়ার কারণ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তবে গভীর আশা লইয়াই আমাদের বাঁচিয়া থাকিবার সংগ্রাম করিতে হইবে। ঈদ ও নববর্ষের আনন্দের রেশ যখন এখনো রহিয়া গিয়াছে, সেই রকম আনন্দঘন মুহূর্তে আমরা কামনা করি, বিশ্বের সর্বত্র উত্তেজনার নিরসন হউক। দেশে দেশে ফিরিয়া আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার