নিউজ ডেস্ক:
আজ মহান মে দিবস। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের স্বীকৃতির দিন। শ্রমিকদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য-‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ।’
মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মে দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও শ্রমবান্ধব বর্তমান সরকার শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণসাধন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা, সুস্থতাসহ সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে।
১৮৮৬ সালের এদিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই সময়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি অজ্ঞাতনামা কেউ বোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। এতে ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ওইদিন তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ শিকাগোর হে মার্কেটে দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়। তবে দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় আরও পরে। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালে আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর ১৮৯৪ সালে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে।
ধারবাহিকতায ১০০ বছর পর ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবে বিশ্বজুড়ে সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার’ সিদ্ধান্ত নেন। এরপর থেকে সারা বিশ্বে দিনটি ‘মে দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এসব বিবৃতিতে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছে মে দিবসের মূল অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক জনসভা করবে জাতীয় শ্রমিক লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। মে দিবস উপলক্ষ্যে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি। এছাড়াও আজ বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা মঞ্চে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসব পরিবেশনার মধ্যে থাকবে গণসংগীত ও নাটিকা। সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।
অনুষ্ঠানে সংগঠনটির আওতাধীন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী সংঘ এবং বাংলাদেশ স মিল শ্রমিক ফেডারেশনসহ সব সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেবে। বিকাল ৪টায় গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাম্বিয়া বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ ও র্যালি করবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। মে দিবস উপলক্ষ্যে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন। তারা বলেন, মে দিবস বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। দেশে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে অন্য পেশাজীবীদের বেতনভাতা বাড়লেও সাংবাদিকরা পিছিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন অনিয়মিত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার