স্টাফ রিপোর্টার:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের হাতে আটক সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামের এক নারী আসামির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে হাসপাতালে পড়ে থাকা মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ভেড়ামারি গ্রামের রেখা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নিহতের স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করে র্যাব। তারা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
আটকের পর রাতে র্যাব হেফাজতেই ছিলেন মা-ছেলে। পর দিন শুক্রবার সকালে সুরাইয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার বিনীত দাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মূলত মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
র্যাব হেফাজতে কীভাবে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে তার সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মো. ফাহিম ফয়সাল।
তিনি বলেন, হত্যা মামলায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ভৈরব ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়। পরবর্তীতে হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুরাইয়া খাতুন নামের এক আসামি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে ময়মনসিংহ ক্যাম্পের সিও আসবেন বলে জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, দেড় বছর আগে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাইজুল ইসলাম যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করে। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার তাইজুলকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও সে অটোরিকশা কিনেনি বলে অভিযোগ করেছেন রেখার পরিবার। পরে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা। এরই মধ্যে রেখা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন নির্যাতন করে আহত করে। তারপর রাতেই তাকে আহত অবস্থায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনার পর তাইজুল ও তার মা হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
এদিকে রেখার মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করতে থাকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। দাফন শেষে তারা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করে। এরপর গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুর) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
নিহত রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক আছে।
নিহত সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম মোবাইলে জানান, রেখা আক্তার ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তার পরিবার মামলা করেছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবেলা করব।
তিনি আরও বলেন, র্যাব সুস্থ অবস্থায় আমার স্ত্রী ও ছেলেকে আটক করেছে। খবর পেলাম রাতেই আমার স্ত্রী মারা গেছে। র্যাব নির্যাতন করে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করব। আমি বিচার চাই।
উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চে নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে একজন সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যুর হয়। এই ঘটনায় তখন দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সমালোচনায় পড়ে বাহিনীটি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার