সম্পাদকীয়:
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০। এর মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন এবং নারী ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। তবে প্রতিবছর ভোটার তালিকায় নতুন মুখ যুক্ত হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ কমছে।
দেখা গেছে, সর্বশেষ জাতীয় সংসদের ১০টি উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে গড়ে মাত্র ৩০ শতাংশ। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে অনাগ্রহ কেন বাড়ছে, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া অনুচিত। জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটারদের এমন ভোটকেন্দ্রবিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করি আমরা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে তবেই সেখানে ভোটার উপস্থিতির আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু দেশে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে এমনটি লক্ষ করা যায়নি। বস্তুত নির্বাচন মানে হচ্ছে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ। বিগত দুটি নির্বাচনে সেই সুযোগ না পাওয়ায় দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
মূলত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে হাজির হবে, এটি জোর দিয়ে বলা যায়। সে পরিস্থিতি তৈরি করতে হলে সবার আগে নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের মনে আস্থা তৈরি করতে হবে। আর এক্ষেত্রে সরকার, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও ইসির দায়িত্ব সর্বাধিক।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জনের প্রক্রিয়ায় থাকলেও এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত ৫২ বছরেও দেশে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পাওয়ায় সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশনও গঠন করা যায়নি। এ কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ওপর অধিকাংশ মানুষ আস্থাশীল হতে পারেনি; বরং বিগত দিনগুলোয় প্রতিষ্ঠানটির কার্যকলাপ জনমনে নানা প্রশ্নের জš§ দিয়েছে।
এ পর্যন্ত দেশে ১৩টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি কমিশন ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এসব নির্বাচনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচন ছাড়া বাকি নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনি কাজে ক্ষমতাসীনদের যে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করার দৃঢ়তা নির্বাচন কমিশনের থাকা প্রয়োজন হলেও হতাশাজনক হলো, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যতটা শক্তিশালী নির্বাচনি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, তার ধারেকাছেও আমরা যেতে পারিনি।
এ অবস্থায় স্বাধীন, দৃঢ়চেতা এবং যে কোনো অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার মানসিকতাসম্পন্ন একটি নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের সততা ও আন্তরিকতায় দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হলে সাধারণ মানুষ ভোটদানে আগ্রহী হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার