স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের কম্পিউটার ইনচার্জ অমিতকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায় সুমাইয়া আক্তার সুমি। এরপর নগরের ক্রাইমজোন হিসেবে পরিচিত হোসনাবাদের নির্জনস্থানে নিয়ে এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ফয়সলের নেতৃত্বে এলোপাতাড়ি মারধর করে তাকে খুন করা হয়। এ সময় অমিতেরই মোটরসাইকেলের থাকা হেলমেট দিয়ে মাথার পেছন অংশে আঘাত করা হয়। এতে মাটিতে লুটে পড়েন অমিত। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সিলেটের আদালতে জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সুমাইয়া আক্তার সুমি ও তার প্রেমিক তাহমিদ আহমদ। এর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও তারা খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। তবে প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সল ঘটনা সম্পর্কে মুখ খোলেনি। পুলিশ বলছে; ফয়সল ঘটনা স্বীকার না করলেও সুমাইয়া আক্তার সুমি ও তাহমিদ আহমদ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। পরে অবশ্য সুমি ও তাহমিদের ভাষ্য থেকে ঘটনার মূল হোতা হিসেবে সন্ত্রাসী ফয়সলের নাম এসেছে। অমিত দাস শিবু সিলেট থেকে প্রচারিত আঞ্চলিক সংবাদপত্র উত্তরপূর্বের কম্পিউটার ইনচার্জ ছিলেন।
গত ২৬শে এপ্রিল মধ্যরাতে সিলেট নগরীর ক্রাইমজোন হোসনাবাদ থেকে অমিতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহত অমিতের ভাই অনুকূল দাস থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় হোসনাবাদ এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী ফয়সল আহমদকে। সে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ৭-৮টি মামলার আসামি সে। প্রথমে ঘটনাটি ছিল রহস্যঘেরা। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে স্থানীয়দের ভাষ্য থেকে জানতে পারেন, ঘটনার রাতে ওই এলাকায় সন্ত্রাসী ফয়সলের বিচরণ ছিল। এ কারণে প্রথমেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়- গ্রেপ্তার করা হলেও পেশাদার অপরাধী হওয়ার কারণে ফয়সল ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুমাইয়ার আক্তার সুমি ও তাহমিদের বিষয়টি সে পুলিশকে জানিয়েছে। এদিকে ঘটনার পরপরই সিলেট ছেড়ে পালায় সুমি ও তার প্রেমিক তাহমিদ। সুমির সঙ্গে তাহমিদের সর্ম্পক অনেক দিনের। বিয়ে ছাড়াই তারা দু’জন বসবাস করতো নগরীর আরামবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। খুনের ঘটনার পর তারা আরামবাগের বাসা ছেড়ে সিলেট থেকে কুমিল্লা শহরে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ২৭ দিনের মাথায় পুলিশ গত বুধবার রাতে কুমিল্লা শহর থেকে গ্রেপ্তার করে তাদের। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার ওসি (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে জানিয়েছেন- গ্রেপ্তারের পর সুমি ও তাহমিদ খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের সিলেটের এমএম আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়ার আদালতে পাঠানো হয়।
সেখানে খুনের দায় স্বীকার করে তারা দু’জনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন- ঘটনায় সম্পৃক্ত কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান তৎপর রয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখা থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অমিত খুনের আসামি গ্রেপ্তার ও ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পুলিশ জানায়- নিহত অমিত দাস শিবুর সঙ্গে সুমির ফোনে যোগাযোগ হয় এবং তারা হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার কথা বলেছে। কথা বলার একপর্যায়ে তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে চায়। এ অবস্থায় সুমি অমিতের ওপর বিরক্ত ছিল। এদিকে অমিত বার বার ফোন করে বিরক্ত করার কারণে সুমি তার পাড়ার প্রভাবশালী বড় ভাই ফয়সলকে বিষয়টা জানায়। ফয়সল তখন সুমিকে বলে অমিতকে ফোন করে হাজারীবাগ এলাকায় নিয়ে আসতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে অমিতকে শাহী ঈদগাহ এলাকায় মোবাইল ফোনে ডেকে আনে। এ সময় শাহী ঈদগাহ এলাকাস্থ মিনার গেটের নিচে তাদের দু’জনের দেখা হয়।
একপর্যায়ে অমিতের মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে হাজারীবাগ এলাকায় যায় সুমি। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরপরই ফয়সল ও তার সঙ্গে থাকা আরও ৪-৫ জন আসামি অমিতের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে এবং তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। এ সময় সন্ত্রাসী ফয়সলসহ অন্য আসামিরা অমিতের মোটরসাইকেলের হেলমেট দিয়ে তাকে আঘাত করে এবং এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারে। অমিতকে মারধরের সময় সুমি তার কথিত প্রেমিক তাহমিদকে ফোন দেয়। কিছুক্ষণ পরে তাহমিদও ঘটনাস্থলে এসে মারামারিতে অংশ নেয়। এলোপাতাড়ি মারধরের একপর্যায়ে অমিত ঘটনাস্থলে মারা গেলে তার লাশ ওখানেই ফেলে চলে যায় ঘাতকরা। এদিকে দৈনিক উত্তরপূর্বের প্রধান প্রতিবেদক তালুকদার আনোয়ারুল ইসলাম জানান,- শুরুতে আসামিরা ছিল অজ্ঞাত। পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। আশা করি পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দেবে। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার