স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ায় ঈদের মার্কেট করে দেওয়ার নামে আবাসিক হোটেলে নিয়ে স্ত্রী আশা মনি (২২) ও তার ১১ মাস বয়সি ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফিকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আজিজুল হক (২৩) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয় শিশুটির মাথা বিচ্ছিন্ন করে করতোয়া নদীতে নিক্ষেপ করা হয়েছে। গৃহবধূর বিবস্ত্র রক্তাক্ত মরদেহ বাথরুমে উপুড় হয়ে পড়েছিল। আর খাটের নিচে বস্তায় শিশুর মাথাবিহীন লাশ ছিল।
শনিবার রাতের কোনো এক সময় শাজাহানপুর উপজেলার বনানী স্ট্যান্ড এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি টের পেয়ে ঘাতক আজিজুল হককে আটক করে পুলিশে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।
শাজাহানপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মেয়ের পরিবার দাবি করছে যৌতুক না পেয়ে আশা মনিকে হত্যা করেছে।
আবার আজিজুল হক দাবি করেন, পরকীয়া প্রেমের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্ত্রী ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করেছেন। এরপর ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে শহরের ফতেহআলী রেল ব্রিজের কাছে করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন। বিকালে এ খবর পাঠানোর সময় সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল লাশ দুটি উদ্ধার করছিল। পাশাপাশি ঘাতককে সঙ্গে নিয়ে নদী থেকে শিশুটির মাথা উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, ঘাতক আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে। তিনি প্রায় তিন বছর আগে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টির আশাদুল ইসলামের মেয়ে আশা মনিকে বিয়ে করেন।
আশামনির ভাই মেহেদী হাসান ও মামা অয়েন আলী জানান, আজিজুল হক প্রায় দুমাস আগে ধুনটের হেউটনগর গ্রামের বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী আশা মনি ও ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফিকে নিয়ে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর নামে শনিবার বিকালে তারা বাড়ি থেকে বের হন। আজিজুল হক রাত ১০টার দিকে ফোনে শ্বশুর আশাদুলকে জানান, শরীর খারাপ লাগায় আশা মনিকে বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন আশা মনি বাড়িতে যায়নি। এরপর শনিবার সারারাত তাকে খোঁজা হয়। ফেসবুকে ছবিসহ তার নিখোঁজ সংবাদও দেওয়া হয়েছিল।
শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর আজিজুল হক তার স্ত্রী আশা মনি ও শিশুসন্তান রাফিকে নিয়ে রাতযাপনের জন্য আসেন। তাদের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর শীতাতপ রুম দেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে আজিজুল হক হোটেল থেকে বের হয়ে যান। তিনি শনিবার বেলা ১১টার দিকে রুমের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে না থাকায় সন্দেহ হয়। এরপর তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পরে পুলিশ এসে রুমের ভিতরে বাথরুমে স্ত্রীর গলাকাটা বিবস্ত্র লাশ এবং খাটের নিচে ছেলের মস্তকবিহীন বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পাওয়া যায়। রুমে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও একটি চাপাতি পাওয়া গেছে।
আশা মনির বাবা, মা, ভাই, বোন ও স্বজনরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আজিজুল হক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানান, আশা মনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে সে শিশু রাফির বিচ্ছিন্ন মস্তক করতোয়া রেলসেতুর কাছে নদীতে নিক্ষেপ করে।
শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ও অন্যরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈনিক আজিজুল হক স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তার অবর্তমানে স্ত্রী আশা মনি পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষোভ থেকে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেছেন। শিশুর খণ্ডিত মস্তক নদীতে ফেলে দিয়েছেন। পুলিশ আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে শিশুর খণ্ডিত মস্তক উদ্ধারে করতোয়া নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মামলা হলে আজিজুল হককে গ্রেফতার করা হবে।
জোড়া খুনের খবর পেয়ে শত শত নারী-পুরুষ আবাসিক হোটেলের সামনে ভিড় করেন। তাদের অনেকে বলছিলেন, বনানী এলাকার শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে দম্পতিরা বেশি আসেন। হোটেলের কর্মচারীরা কক্ষের দরজায় ছিদ্র করে বোর্ডারের ছবি তুলে তাদের কাছে টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন।
নিহত আশা মনির বাবা আশাদুল হক জানান, বিয়ের সময় জামাইকে যৌতুকের ছয় লাখের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। অবশিষ্ট এক লাখ টাকা দিতে না পারা নিয়ে দাম্পত্য কলহের জেরে আজিজুল হক তার মেয়ে ও নাতিকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তবে আজিজুল হকের বাবা হামিদুর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার