স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার শাজাহানপুরের বনানী এলাকায় আবাসিক হোটেলে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ আশা মনি (২২) ও তার ১১ মাস বয়সি শিশু আব্দুল্লাহ আল রাফিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহত আশা মনির বাবা আশাদুল ইসলাম রোববার রাতে শাজাহানপুর থানায় জামাতা আজিজুল হক ও তার বাবা (বিয়াই) হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পুলিশ গ্রেফতার দুই আসামিকে সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠিয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দুদিন শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীতে অভিযান চালিয়েও শিশু রাফির মাথা উদ্ধার করতে না পেরে অভিযান শেষ করেছে।
ডিবি পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজ হাসান জানান, আসামিদের স্বীকারোক্তি রেকর্ড বা তাদের রিমান্ডের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, ঘাতক আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে। তিনি প্রায় তিন বছর আগে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টির আশাদুল ইসলামের মেয়ে আশা মনিকে বিয়ে করেন।
আশামনির ভাই মেহেদী হাসান ও মামা অয়েন আলী জানান, আজিজুল হক প্রায় দুমাস আগে ধুনটের হেউটনগর গ্রামের বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার স্ত্রী আশা মনি ও ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফিকে নিয়ে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর নামে শনিবার বিকালে তারা বাড়ি থেকে বের হন।
আজিজুল হক রাত ১০টার দিকে ফোনে শ্বশুর আশাদুলকে জানান, শরীর খারাপ লাগায় আশা মনিকে বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন আশা মনি বাড়িতে যাননি। এরপর শনিবার সারারাত তাকে খোঁজা হয়। ফেসবুকে ছবিসহ তার নিখোঁজ সংবাদও দেওয়া হয়েছিল।
শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর সেনা সদস্য আজিজুল হক তার স্ত্রী আশা মনি ও শিশুসন্তান রাফিকে নিয়ে রাতযাপনের জন্য আসেন। এ সময় তিনজনের ভিন্ন নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। তাদের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর শীতাতপ কাপল রুম দেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে সৈনিক আজিজুল হক হোটেল থেকে বের হয়ে যান। তিনি রোববার বেলা ১১টার দিকে রুমের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে না থাকায় সন্দেহ হয়। এরপর তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে রুমের ভিতরে বাথরুমে স্ত্রীর গলাকাটা বিবস্ত্র লাশ এবং খাটের নিচে ছেলের মস্তকবিহীন বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পাওয়া যায়। রুমে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও একটি চাপাতি পাওয়া গেছে।
আশা মনির বাবা, মা, ভাই, বোন ও স্বজনরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আজিজুল হক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানান, আশা মনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে শিশু রাফির বিচ্ছিন্ন মস্তক হোটেল থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া করতোয়া রেলসেতুর কাছে নদীতে নিক্ষেপ করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কৈগাড়ি ফাঁড়ির এসআই হাসান হাফিজ ও অন্যরা জানান, নিহত আশা মনির বাবা আশাদুল ইসলাম শুক্রবার রাতে শাজাহানপুর থানায় জামাই আজিজুল হক ও বিয়াই হামিদুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ হেফাজতে থাকা বাবা ও ছেলেকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
আজিজুল হক দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে পুলিশকে বলেছে, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম সহ্য করতে না পেরেই তাদের পরিকল্পিতভাবে হোটেলে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। নিরপরাধ শিশুসন্তানকে হত্যার ব্যাপারে সে জানায়, স্ত্রী মারা গেছে; সন্তান কার কাছে মানুষ হবে- এ চিন্তা করেই তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাতেই শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীতে মস্তকটি নিক্ষেপ করে। রাতে আর হোটেলে ফিরে না এসে নারুলী এলাকার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আশা মনি ও শিশু রাফি নিখোঁজের নাটক করেন।
হত্যাকাণ্ডের আগে আজিজুল শহরের রেলঘুমটি এলাকার দোকান থেকে চাকু ও চাপাতি কিনে আনে। পর্যায়ক্রমে লাশ দুটি গুমের অংশ হিসেবে প্রথমে শিশুর মাথা করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়ায় তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে আশা মনির বাবা, ভাই ও স্বজনরা দাবি করেন, আজিজুল যৌতুকের টাকা না পেয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এদিকে আজিজুল হকের স্বীকারোক্তিতে রাজশাহী থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল রোববার বিকালে ও সোমবার সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীতে তল্লাশি চালালেও শিশু রাফির মস্তক পাওয়া যায়নি। এরপর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
নিহত আশা মনির বাবা আশাদুল হক তার মেয়ে ও নাতিকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার