স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম চিকিৎসাকেন্দ্র সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ ছাড়াও নিকটবর্তী জেলা নেত্রকোনা ও বি-বাড়িয়ার মানুষও আসেন এই হাসপাতালে। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি এবার বধির চিকিৎসার জন্য ভরসার স্থান হয়ে উঠবে হাসপাতালটির কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে ২০২২ সালের ১৫ মে সর্বপ্রথম অপারেশন করে আদ্রিকা রায় কথা এক শিশুর কানে স্থাপন করা হয়েছিল কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট। এরপর একে একে ৬২ জন রোগীকে অপারেশনের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে শোনার সক্ষমতা। তাদের মধ্যে অনেকেই আগে কানে একেবারেই শুনতে পেতেন না। এখন তারা সকলেই কানে শুনতে পারছেন।
বুধবার (১২ জুন) দুপুরে ওসমানী মেডিকেলের নতুন ভবনের ১০ম তলায় কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান ওসমানী মেডিকেলে চলমান এ কর্মসূচি পরিচালক ডা. নূরুল হুদা নাঈম।
এসময় তিনি জানান, সারাদেশের ৫টি স্থানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে চলমান আছে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম। এই ৫টির একটি ওসমানী মেডিকেলের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম। সিলেটের মানুষ অনেক সৌভাগ্যবান এখানকার ৬ জন চিকিৎসক আন্তর্জাতিক মানের এক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগে সক্ষম। তাদের হাতেই সিলেটের রোগীদের অপারেশন হচ্ছে। নানারকম সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সরকারের এ উদ্যোগটি জন্মবধির ব্যক্তিদের জন্য এক আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দিয়েছে। লোকবল ও আনুষঙ্গিক সাপোর্ট বৃদ্ধি হলে এ সেবার পরিধি আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। সরকারের অত্যন্ত মহৎ এই প্রকল্পটি এক স্বপ্নযাত্রার নাম। আমরা আশাবাদি ধীরে ধীরে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সিলেটে যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন অবধি মোট ৬২ জন রোগীর সার্জারি করেছি। তারা সবাই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি ছিল।
এতে উপস্থিত ছিলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহিদুল ইসলাম, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী, ডিভিশনাল কন্টোলার অব অ্যাকাউন্টস মো. হাসান হাফিজুর রহমান ভূঞা, সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. নাজির উদ্দেন, সিলেটের সহকারী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্তসহ অন্যান্য চিকিৎসক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
জানা গেছে, যাদের ঘরে জন্মবধির শিশু রয়েছেন তারা সরকারের এ সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা হলেও সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করে দিচ্ছে। পূর্ব নির্ধারিত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ রোগীকে বহন করা ছাড়া রোগীর তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমে গরীব ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর বধিররা কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস পাচ্ছেন। বধির দরিদ্র রোগীদেরকে বিনামূল্যে ডিভাইস দেওয়া হচ্ছে এবং স্বচ্ছল পরিবারের রোগীদেরকে আংশিক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ইতোমধ্যে ৬২টি ডিভাইস সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩২ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়ে শিশু রয়েছে। আর প্রাপ্তবয়স্ক ৪ জনও রয়েছেন। আরও ৩৫টি ডিভাইস স্থাপনের আবেদন অপেক্ষমান আছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শব্দ বুঝতে ও কথাবলা শেখানোর জন্য ইমপ্লান্ট গ্রহীতাকে স্পিচ থেরাপি বা হেবিলিটেশন থেরাপি প্রদান করা হয়। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ল্যাব ও আলাদা অপারেশন থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছে। জনবল তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে এখানকার ৬ জন চিকিৎসক এখন এ সেবা প্রদানে পুরোপুরি সক্ষম। এছাড়াও ইমপ্লান্ট সার্জারির সুবিধার্থে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে প্রয়োজনীয় উচ্চ কারিগরী মানসম্পন্ন অডিওলজিক্যাল এবং সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে।
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট গ্রহণে আগ্রহী শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের সরকারি সহায়তায় বিনামূল্যে-আংশিকমূল্যে সার্জারির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এ সুবিধা প্রদান করা হয়। নির্ধারিত ফরমে তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে এ সার্ভিসটি গ্রহণের আবেদন করা যাবে।
ডা. অরূপ রাউতের সঞ্চালনায় সাধারণ জনগণের জ্ঞাতার্থে সংবাদ সম্মেলনে ইমপ্লান্ট কার্যক্রম বর্ণনা করেন চিকিৎসকরা। জন্মগত বধিরদের ক্ষেত্রে ৫ বছর বয়সের পূর্বে বিশেষত: ২-৩ বছর বয়সে ইমপ্লান্ট করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কথা শেখার পর যাদের শ্রবণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা সাধারণত ভাল ফলাফল পেয়ে থাকে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার