স্টাফ রিপোর্টার:
বৃষ্টি কমায় সিলেটে বন্যার পানি কমে আসছে। বানভাসি মানুষের মনেও কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। ‘তবে পানি কমার গতি খুব ধীর। বন্যাকবলিত এলাকায় ভোগান্তি রয়েছে,’—এই মন্তব্য করে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান রোববার বিকালে বলেন, এখনো ১৯ হাজার লোক বাড়ি যেতে পারেনি। প্রশাসন থেকে তাদের এক বেলা রান্না করা খাবার ও বাকি দুই বেলা শুকনো খাবার দেওয়া হয়। রবিবার বিকালে তিনি সদর উপজেলার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসক জানান, এবার বন্যায় ১৩টি উপজেলায় ১০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২৫ হাজার লোক আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়। আবহাওয়া বার্তার বরাত দিয়ে আগামী ২৮ জুন সিলেটে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, যদি ২৮ তারিখ ভারী বৃষ্টি হয়, তাহলে বর্তমানে পানি যে লেভেলে রয়েছে, তা বাড়তে সময় লাগবে না। এরকমটি হলে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হতে পারে।
চলমান বন্যায় সিলেটের চার জেলায় ২১ লক্ষাধিক লোক বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ঈদের আগের দিন থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি নেমে সিলেট অঞ্চলকে বিপন্ন করে তোলে। এতে বানভাসি মানুষের ঈদের আনন্দ উবে যায়। গত কয়েক দিন রোদ উঠলেও নিম্নাঞ্চলে এখনো পানি জমে আছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদনদীর পরিমাপে দেখা যায়, প্রতি তিন ঘণ্টায় মাত্র এক সেন্টিমিটার পানি কমছে। এখনো সুরমা-কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ওপরে। গতকাল ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি সন্ধ্যা ৬টায় বিপত্সীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জকিগঞ্জের অমলসিদে কুশিয়ারার পানি সন্ধ্যা ৬টায় বিপত্সীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কানাইঘাটে সুরমার পানি অনেক কমলেও সন্ধ্যা ৬টায় বিপত্সীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেটের গোয়াইনঘাটসহ কয়েকটি উপজেলায় পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগের শেষ নেই। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যেরও তীব্র সংকট। কৃষিজমি এখনো পানির নিচে। জমে থাকা নোংরা পানি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। দুই দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢল থেমেছে। নদনদীর পানি বাড়েনি।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি, মত্স্য ও পশুর খামার তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্যার পানি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করায় চলমান ঈদের বন্ধের পর পাঠদান শুরু নিয়ে সংশ্লিষ্টরা চিন্তায় পড়েছেন। উপজেলাগুলোর বিভিন্ন বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরও পানি প্রবেশ করে। এতে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে বেশ সময় লাগবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার