স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি চলছে। সোমবার (১ জুলাই) তলিয়েছে জেলার অন্তত: ৪টি উপজেলা। মহানগরেরও অনেক জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দিন ও রাতভর সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে ও নতুন করে আরও এলাকা প্লাাবিত হয়ে সিলেটে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৯টায় সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া সকাল পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ৩ শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে সিলেটে তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। দ্বিতীয় দফার বন্যায় ৭ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী। এরই মাঝে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমবার নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে জেলার ৪টি উপজেলায়। রাতের দিকে মহানগরের অনেক স্থানে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই সপ্তাহ ব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দী ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ ঈদুল আযহার দিন ভোররাত থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিভারী বর্ষণে মহানগরসহ সিলেটের সব উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েন। পরবর্তী এক সপ্তাহ সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ছিলো ভয়াবহ। এরপর পানি নামতে শুরু করে। তবে সে গতি ছিলো খুব ধীর।
দ্বিতীয় দফা বন্যা শেষ হওয়ার আগেই সোমবার থেকে সিলেটে ধাক্কা দিয়েছে তৃতীয় দফা বন্যা। রবিবার (৩০ জুন) দিনভর সিলেটে থেমে থেমে ও উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার যেসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছিলো সেসব এলাকা ফের প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন করে প্লাবিত বাড়ি-ঘরের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন বাজার তলিয়ে পানি ঢুকেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এতে নতুন করে ক্ষতিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা। ফলে তৃতীয় দফা ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় সূত্র মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায়
সিলেটে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পাউবো আরও সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সিলেটের ৫টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে ছিলো। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১১৮ সে.মি., কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সে.মি, এ নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ২২ সে.মি ও কুশিয়ারা পয়েন্টে ০.৭ এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে বলে জানায় পাউবো।
এদিকে, সোমবার রাতে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়- এদিন দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগর ছাড়া জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি চলমান আছে। জেলার ১ হাজার ৮১টি গ্রামের ৭ লাখ ৩ শ ৩৬ জন মানুষ পানিবন্দী। এসব উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ হাজার ৩০৮ জন মানুষ রয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রত্যেক উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কন্ট্রোল স্থাপন করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত অসুস্থ মানুষকে প্রদান করা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার