এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
ঢাকায় এ. আর, খানের বাসায় ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক, এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। কালের বিবর্তনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন আওয়ামীলীগের সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৭০ সালে অখন্ড পাকিস্তানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ‘অখন্ড পাকিস্তানে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের জন্য চরম ভূল সিদ্ধান্ত ছিল। যদি গণরায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বাভাবিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হত, তাহলে জনাব শেখ-মুজিবুর রহমান হতেন অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তখন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি বিভক্তির কোন যৌক্তিকতা থাকত না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আবুল আসাদ রচিত “একশ বছরের রাজনীতি” বইটি তে দেখা যায় ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার সময় একক নেতৃৃত্বেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অঞ্চলকে নিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিলেন। যদিও ভারত এবং বৃটিশ শাসকগোষ্ঠী চরম বিরোধীতা করেছিল। দুই-শক্তির বিরোধীতা সত্তে¡ও অবশেষে সফল হন ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। নামকরণ হয় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। যদি ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের দূরত্ব ছিল প্রায় ১২০০ কি.মি.। জম্মু কাশমিরের চেয়ে ভালো হবে এ ধরনের মনোভাব নিয়ে ১৪ আগষ্ট স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ভারত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট। ভারত কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানকে কখনও পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে থাকুক মন থেকে চায়নি। যেমনটি বৃটিশ নেতা লর্ড কর্নওয়ালিস এর নেতৃৃত্বে সিলেট জেলা ভারতের সাথে থাকবে, না পাকিস্তানের সাথে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গনভোট অনুষ্ঠিত হয়। গনভোটে সিদ্ধান্ত হয় পাকিস্তানের সাথে থাকার। কিন্তু এ সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে আড়াই থানা জবর দখলে আজ অবধি রাখেন ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম-দিকে ভারতীয় সীমানা প্রায় ৩২০০ কি.মি.। এ দূরবিসন্ধী চিন্তাধারা থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের জনগনকে তাদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সফল হয়। বাংলাদেশ নামক দুর্বল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের খবরদারিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। স্বাধীনতার পর তাদের প্রভাব দেখাতে শুরু করেন। যেমন: যেখানে সাধারণ জনগন দেশীয় অস্ত্রে সস্ত্রে¿ সজ্জিত হয়ে প্রশিক্ষিত-পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করিল। স্বশস্ত্র বাহিনীর সম্মুখে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের নামক রাষ্ট্রকে যেখানে স্বাভাবিকভাবে ভারতীয়রা মেনে নিতে পারেনি, সেই প্রতিহিংসা জিজ্ঞাংসা করতে-১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভাংগনকে ত্বরান্বিত করতে ভারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেছে মাত্র। প্রকাশ থাকে যে, ভারতের ক্যাপ্টেন অরোরার নিকট পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক প্রধান জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পন পত্রে সাক্ষর করেন। বাস্তবে স্ব-শস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানির নিকট জেনারেল নিয়াজির অত্মসমর্পন করার কথা। কিন্তু বিধি বাম! কৃতিত্ব নিল ভারত। নিবেই না কেন? তাদেরই মদদপুষ্ট বার্মার সীমান্ত ৭৮ কিঃ মিঃ যেখান দিয়ে রুহিঙ্গাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শুধু দক্ষিনে বঙ্গপসাগর। স্থল পথে বাংলাদেশের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত সংসদ সদস্যগন কর্তৃক ১৯৭২ সালে সংবিধান রচিত, পাটিত ও অনুমোদিত হল। সংবিধানে অল্প সময়ের মধ্যে ৪ টা সংশোধনী হল। যাহার নেতৃৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিলুপ্ত হল। প্রতিষ্টা করা হল ‘বাকশাল’। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাকশাল প্রতিষ্ঠায় দলের মধ্যে বিভক্তি শুরু হল। জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেন, জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী, ব্যারিষ্টার মইনুল ইমলাম, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সহ অসংখ্য নেতা কর্মী। “বাকশাল” ব্যতিত অন্য কোন রাজনৈতিক দল থাকবে না। জাতীয় ৪টি পত্রিকা ব্যতীত অন্য কোন পত্রিকা থাকবে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট নির্মম হত্যাকান্ড। স্ব-পরিবারে নিহত হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান কে. এম. শফিউল্লাহ, বিমান বাহিনী প্রধান এ.কে. খন্দকার এবং রক্ষী বাহিনীর প্রধান তোফায়েল আহমদ ছিলেন। ধানমন্ডির ৩২ নং বাসায় প্রেসিডেন্ট ও তাহার পরিবারের ক্ষতবিক্ষত লাশ। বাহিনী প্রধানগন এগিয়ে আসেননি। এমনকি দাফন কাফনে ও কেহ শরিক হন নি। জিজ্ঞাসা করা হলে, তাদের উত্তর ছিল, পরিস্থিতির স্বীকার। প্রেসিডেন্টের লাশ দাফনের পূর্বেই খন্দকার মোশতাকের নেতৃৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে নেতারা ৬ বোতামের কাল কোটি পরিহিত অবস্থায় মন্ত্রীসভায় যোগদানের অপেক্ষায়। সাংবাদিকরা তাদেরকে প্রশ্ন করলে উত্তর দেন খন্দকার মোশতাক তো আমাদেরই স্বজন। দলীয় সেকেন্ড ইন কমান্ড। সুতরাং তাহার সরকারে যোগদিতেই পারি। এটা তো দোষের কিছু নহে। কর্নেল খালেদ মোশররফ এর নেতৃৃত্বে অভ্যুথান, পাল্টা অভ্যুথানে খন্দকার মোশতাক পদচ্যুত হলেন। দেশ তখন চরম বিপর্যয়ে। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহি বিদ্রোহ হল। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেই সিপাহী বিদ্রোহের মাধ্যমে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করা হল। জেনারেল জিয়া হাল ধরলেন রাষ্ট্রের। সামরিক শামন জারী করলেন। হ্যা-না ভোটের ব্যবস্থা করলেন। সেই হ্যা-না ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট-হলেন। সামরিক শাসন প্রত্যাহার করলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন। বিলুপ্ত আওয়ামীলীগ বহুদা ভিরক্ত ছিল। মিজান (আঃ লীগ), মালেক উকিল (আঃ লীগ), সাজেদা (আঃ লীগ)। শেষ পর্যন্ত জহুরা তাজ উদ্দিনের নেতৃত্ব একক আওয়ামীলীগ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হল। ১৯৮১ সাল। শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নেতৃতে দলীয় নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত ও উজ্জিবিত হল। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে সংসদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলেন। উপাধি পেলেন গণতন্ত্রের মানষ কন্য। তাহার-ই নেতৃত্বে ১৭২ দিন হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্টিত হল। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্টিত হল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হল। সংসদে তত্বাবধাক সরকার বিল আনয়ন করা হল। সংসদীয় কমিটি তত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার সুপারিশ করলেন। আওয়ামী সমর্থীত আইনজীবি মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে তত্ত¡াবধায়ক সরকার বাতিলের নির্দেশনা’ চেয়ে মামলা করলেন। মাননীয় আদালতের আদেশে তত্ত¡াবধায়ক সরকার কাতিল ঘোষনা বাতিল হল। তা হলে ১৭২ দিন হরতাল অবরোধ দিয়ে কেন সাধারণ জনগনের ক্ষতি করলেন? যে কোন আইনজীবি এই- ১৭২ দিন কেন হরতাল, অবরোধ দিয়ে জাতির যে ক্ষতি করেছেন, তাহার ক্ষতি পূরণ চেয়ে দল নিষিদ্ধের জন্য মাননীয় আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রীট দাখিল করতেই পারে? আদালত রীট কারীর আবেদন টি আমলে নিয়ে যে কোনা আদেশ দিতে পারেন?
১৯৭২ সালের সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরকার গঠিত হতে হবে। নির্দিষ্ট, বা শতকরা হারে ভোট কাষ্ট না হলে পুনরায় ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল স্প্রীট গণতন্ত্র। তা-কি মানা হচ্ছে?. হয়ত! স্প্রীট বাস্তবায়ন করার উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন প্রধান বিচারপতি এম.কে সিন্হা ও তাহাত সহকর্মীবৃন্দ। বিচারপতিগণ ইতিহাসে অমর হয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন। গোয়েন্দা খবরদারীর কারনে সরকার বাহাদুর এস.কে সিনহাকে ক্যান্সারে আক্রান্তে নাটক সাজিয়ে জোর পূর্বক বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। হয়ত! পট পরিবর্তন হলে সত্য ঘটনা জানতে পারব। কারন ইতিহাম কখন ও বিশ্বাস ঘাতকতা করে না। আপন মহিমায় ইতিহাসবিদরা সঠিক ইতিহাস লিখবেন। যেমন: ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অবকাঠামো যদি মেনে থাকেন, তাহলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কি নির্বাচন বলা যায়? না, কিছুতেই না। গায়ের জোরে সাময়িক ক্ষমতায় থাকা বা দির্ঘস্থায়ী করা যায়। যিনিই অপকর্ম করেছেন, ক্ষমতা চ্যুত হলে তা কিন্তু সময়মতঃ পুনরুজ্জীবিত হবেই। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। জনৈক সংসদ সদস্য বলেই ফেললেন, আনারকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে পবিত্র সংসদে ৮০%, সদস্য স্মাগলার। এসব টাউট বাটপারদের দ্বারা সংসদ গঠিত হওমার কারনে বে-নজির, আজিজ, আব্দুল হাই বাচ্চুদের উত্থান হয়েছে। সরকার কি এসব অপরাধীদের বিচার করতে পারবে? না, কিছুতে-ই না। কারন তাদের বিচার করতে চাইলে, কাহার মদদ দিয়েছে এদের বিচার করা দরকার। বিরাজনীতি করনের শেষ প্যারাঙ্গ নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিছুদিন পূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রঙ্গ মঞ্চ হয়ে গেল। ডামি পার্টির উত্থান হল। উপজেলা নির্বাচনে একই পার্টির একাধিক প্রার্থী। কর্মী সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করলেন। অনেক আপত্তিকর মন্তব্য একে অপরের প্রতি বিষোদগার করলেন। ক্ষতিগ্রস্ত হল দল। পার্টির মধ্যে বিশৃংঙ্খলার কারনে অনেককে হয়ত প্রান দিতে হতে পারে। বিশ্বের যাহা কিছু অর্জিত হয়েছে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে কি আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব দিশে হারা হয়ে গেছে, অবস্থা দৃষ্টে তা-ই মনে হয়?
লখেক: সভাপত-ি সু-শাসনরে জন্য নাগরকি (সুজন) বয়িানীবাজার, সলিটে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার