স্টাফ রিপোর্টার:
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের আগের রায়ের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। অর্থাৎ যেমন আছে, তেমন থাকবে। কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যেসব সার্কুলার দেওয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না।
বুধবার আপিল বিভাগের আদেশে পর নিজ কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
কোটা থাকছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এখন যেহেতু স্থিতাবস্থা আছে তাই আগের চাকরি যেগুলো চলমান আছে, সেগুলো ঠিক থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি ছিল, পরবর্তীতে সেটা ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতির বিষয়ে সরকার একটি কমিটি করে প্রথম ও দ্বতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে সেটা বাতিল করা হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে সেটা বহাল থাকে। পরবর্তীতে এটাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগ রায়ে কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দিয়েছেন। অর্থাৎ হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে কোটা পদ্ধতি যেটা আগে ছিল, সেটাই আবার বহাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ রায়টি চ্যালেঞ্জ করে আমরা আপিল বিভাগে একটি আবেদন করি। যেহেতু রায়ের অনুলিপি পাওয়া যায়নি, তাই আমরা সিএমপি ফাইল করেছিলাম। আজকে সেটির শুনানি হলো। আমরা কোর্টকে বললাম, এখনো রায়ের অনুলিপি পাইনি। রায় না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না। যেহেতু গত ৫ বছর ধরে কোটা পদ্ধতিটা বিলুপ্ত ছিল। সেই ক্ষেত্রে নতুন করে রায় না পাওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের ওপর আমরা স্থগিতাদেশ চেয়েছিলাম। উভয়পক্ষকে শুনানি করে আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। অর্থাৎ যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায়ই থাকবে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এটা বিবেচনায় নিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশেও আছে আন্দোলনকারীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল বিভাগে দিতে পারবে। তাই এখন আন্দোলনের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এখন উচিত এটা বন্ধ করে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যাওয়া। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর আর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই তাদের কাছে।
কোটার প্রকৃত অবস্থা কি হলো এখন?-এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায়ই আছে। স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে। সাবজেক্ট ম্যাটারে এটা বাতিল করা ছিল। যে বিজ্ঞপ্তিগুলো রয়েছে, সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি লাগবে না। মামলাটা আগামী ৭ তারিখে শুনানি হবে, তখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসতে পারে।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত সরকারি চাকরিতে কোটা থাকছে না। বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার কোটা নিয়ে রিটকারী পক্ষ নতুন আইনজীবী নিয়োগ করে বিশেষ চেম্বার আদালতে শুনানির আবেদন করে। পরে চেম্বার বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম শুনানির জন্যে আজকের দিন ধার্য করেন। যেহেতু এখনও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়নি সে হিসেবে বিশেষভাবে চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ চেম্বার আদালত এ বিষয়ে শুনানি মুলতবি করেন।
সেদিন আরজির পরিপ্রেক্ষিতে মুলতবিতে আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দিয়েছিলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পাঁচ বছর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসে।
পরে এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু গত ৯ জুন প্রাথমিক শুনানির পর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার