ভালুকা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকার আঙ্গারগাড়া গ্রামের মোখছেদ আলীর ছেলে টুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ মোক্তাদির (৪৮)। তার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে চিকিৎসক বানাবেন। সে স্বপ্ন পূরণে ছেলেকে ঠিকই বেসরকারি এক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু ছেলে মাহফুজ রহমান তনয় চিকিৎসক হওয়ার আগেই চলে গেলেন মোক্তাদির।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের সময় ২০ জুলাই পুলিশের এই এএসআইকে হত্যা করে লাশ রায়েরবাগ ফুট ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চলে যাওয়ায় মোক্তাদিরের মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া ছেলের পড়ালেখা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
জানা গেছে, দশ সদস্যের পরিবার হওয়ায় বড় ভাইয়ের আশ্রয়ে জামালপুর থেকে এসএসসি পাশ করেন মোক্তাদির। এসএসসি পাশের পর ১৯৯৪ সালে পুলিশের সিপাহি পদে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পুলিশে কর্মরত অবস্থায় এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করেন।
চাকরির সুবাদে বাসা ভাড়া নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। ২০ জুলাই সকাল সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে পল্টন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদরদপ্তরের উদ্দেশে বের হন। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ পৌঁছলে বিক্ষোভকারীরা তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। লাশ ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখে। পরদিন মোক্তাদিরকে আঙ্গারগাড়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহতের ছেলে তনয় বলেন, বাসা থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ডিএমপির কদমতলী থানা থেকে এসআই আল আমিন ফোন করে বাবার মৃত্যুর খবর জানান। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভকারীরা আমার বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, বাবার এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে আমার মা নিরা আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাই কদমতলী থানায়। তার আগেই পুলিশ বাবার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।
তনয় বলেন, থানার এক কর্মকর্তার মোবাইলে ছবি দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটা আমার বাবা। একাধিক আঘাতের চিহ্ন এবং মাথার খুলি তিন টুকরো। এটা মেনে নেওয়ার মতো না। হামলার ভয়ে আমার বাবা বাসা থেকে পুলিশের পোশাক পরেননি। শপিং ব্যাগে পুলিশের পোশাক নিয়ে বের হন। তারপরও ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না।
স্থানীয় সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ জানান, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোক্তাদির। তিনি খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। এলাকায় কারও সঙ্গে কোনো সময় খারাপ আচরণ করেননি। ছাত্র হিসাবে খুবই মেধাবী ছিলেন। ভদ্র-নম্রতায় পুলিশ বাহিনীতে তার সুনাম ছিল।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার