স্টাফ রিপোর্টার:
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত রোগীরা। তাদের কারও পেটে, কারও বুকে, কারও হাতে-পায়ে ছররা গুলির জখম। ক্ষতস্থানের যন্ত্রণার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা আতঙ্কও ভর করেছে তাদের মাঝে। সুস্থ হয়ে শুধু ঘুরে দাঁড়ানোর আকুতি তাদের।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৪২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন কোটা আন্দোলনে আহত রোগীরা। তাদের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জের আবু নাঈম (২৪)। তিনি মিরপুরে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
আবু নাঈমের দাবি, কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে আন্দোলনকারী ও পুলিশের হামলা-পালটা হামলার মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। প্রথমে মিরপুরের আলোক হাসপাতালে ও পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। নাঈমের মা নাসিমা বেগম জানান, প্রথমে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ওয়ার্ডে পাঠানো হয় তাকে।
হাসপাতালের ৪২০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন পোশাক শ্রমিক শফিকুল ইসলাম (৪০)। তার বাড়ি বরিশালের মুলাদিতে। তিনি পরিবার নিয়ে আদাবরের শেখেরটেকে থাকেন। চাকরি করেন মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায়।
শফিকুলের দাবি, গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় কর্মস্থলের সামনেই পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হন তিনি। শফিকুল বলেন, অফিস ছুটি হলে বাইরে এসে দেখি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। সঙ্গে সঙ্গে অফিসের গেটের ভেতর ঢুকে পড়ি। গেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। গেটের ওপর-নিচ দিয়ে গুলি আসছিল। গেটের নিচ দিয়ে আসা ছররা গুলি শফিকুলের বাম পায়ে লাগে।
শফিকুলের স্ত্রী রেখা আক্তার জানান, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। শফিকুলের আয়েই চলতো সংসার এবং বাচ্চাদের পড়াশোনা। এখন কিভাবে স্বামীর চিকিৎসা এবং পরিবার সামলাবেন এ নিয়ে দিশেহারা তিনি।
উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকার একটি বস্তিতে থাকত আট বছর বয়সী শিশু কাউসার। ছোটবেলায় বাবা মারা যান। এরপর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে নিরুদ্দেশ হন তার মা। পরে বস্তির বাসিন্দা মনর খান তাকে লালন-পালন করে আসছেন। সে স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত ১৯ জুলাই বন্ধু মুন্নার সঙ্গে খেলতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয় কাউসার। তার বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ও পরে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে আটদিন ভর্তি রাখার পর গত শনিবার ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। মনর খানের বোন সুমী খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ছেলেটার কেউ নেই। আমরাই তার আপনজন। কাউসারের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শাফিউর রহমান জানান, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহত ৫১৮ জন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৮০ জন রোগীর অপারেশন করা হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তবে গুলিবিদ্ধ কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন তা জানাতে পারেননি তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার