স্টাফ রিপোর্টার:
কুমিল্লার দেবিদ্বারের সূর্যপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাদির হোসেন সোহাগ। বাবার মৃত্যুর পর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ জোগাতে লেখাপড়া ছেড়ে যোগ দেন একটি কুরিয়ার সার্ভিসে। থাকতেন ঢাকার গোপীবাগে একটি মেসে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে জীবন অবসান হয়েছে তার। পরিবারের দাবি, ২০ জুলাই রাত ৮টার দিকে খাবার কিনতে বের হয়ে গোপীবাগ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন সোহাগ। স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ছুটে যান ছোট ভাই সহিদুল ইসলাম।
রাত সোয়া ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোহাগ। পরদিন দুপুরে দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
সহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই কোনো রাজনীতি করতেন না। তার চাকরির টাকায় আমি ও মা দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতাম।
সহিদুল বলেন, ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে খবর দেন তার মেসের বন্ধুরা। আমি রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি ভাইয়ের বুকে ব্যান্ডেজ। আমাকে দেখে ভাই বলেন, তুই এত রাতে এখানে কেন এসেছিস। তুই মাকে দেখে রাখিস।
পুলিশ আমাকে গুলি করেছে। আমি কোনো আন্দোলন করতে যাইনি। খাবার কিনতে গিয়েছিলাম।
সহিদুল আরও বলেন, রাত ৩টা ১৫ মিনিটে আমার চোখের সামনে ভাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বাবা ও ভাই হারিয়ে আমরা আজ নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন আমাদের কে খাওয়াবে? কে মায়ের চিকিৎসা করাবে? আমার নিরপরাধ ভাইকে কেন গুলি করা হলো?
গ্রামের বাড়িতে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সোহাগের মা ও ছোট ভাইয়ের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত ছিলেন সোহাগ। নিরীহ এ যুবকের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এ অবস্থায় এ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান এলাকার লোকজন।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, আমরা নিহতদের খোঁজ নিচ্ছি। তাদের সহযোগিতার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সুপারিশ করা হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার