স্পোর্টস ডেস্ক:
ড্যানফোর্থ প্রিমিয়ার লিগ DANFORTH PREMIER LEAGUE (DPL) সেশন -২ চ্যাম্পিয়ন বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব।
কানাডার বাংলা কমিউনিটির সবচাইতে বড় ক্রিকেট ইভেন্ট ডিপিএল অর্থাৎ ড্যানফোর্থ প্রিমিয়ার লিগ। ফেঞ্চাইজি বেইস এখানে প্রতিটা টিম গঠন করা হয় একদম আইপিএলের আদলে। টরেন্টোতে বসবাসরত চৌকুস ক্রিকেট প্লেয়ারদের নিয়ে গঠিত হয় প্রতিটি দল।
রোবরার (জুলাই ২৮/২৪) সকাল থেকেই স্কারবোরর কর্ভেট ক্রিকেট ফিল্ডে শুরু হয় চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই।
বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব কানাডার টরন্টো শহরের সবচাইতে একতাবদ্ধ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক প্লেয়ারদের নিয়ে গঠিত একটি ক্লাব।
প্রবাসের মাঠিতে বিশাল ফ্যানবেইজ নিয়ে মনসুর -সায়েমদের স্বপ্ন আর প্রচেষ্টায় প্রায় অবিশ্বাস্য একটি স্বপ্নযাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছিলো পথ চলা।
সেই স্বপ্নযাত্রা শুরুর পর থেকেই কখনো ফুটবল; কখনো ক্রিকেট; কখনো আন্তঃ বিয়ানীবাজার টুর্নামেন্ট।
এভাবে নানা সময় বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব বাংলা কমিউনিটির সবার সুপরিচিত একটি নাম এবং ব্র্যান্ডে পরিনত হচ্ছে।
টরেন্টোর স্কারবো এলাকার কর্ভেট ফিল্ডে নগরের সবচাইতে ব্যবহুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ডিপিএল টুর্নামেন্টে মোট ১২ টি দল অংশগ্রহণ করে।
দুই গ্রুপে ছয়টি করে দলে বিভক্ত হয়ে শুরু হয় চ্যাম্পিয়নশীপ লড়াই। দুটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দুটি দল প্রথম প্লে অফ এবং দুই রানারআপের মাঝে অনুষ্টিত হয় দ্বিতীয় প্লে অফ।
বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব প্রথম প্লে অফ ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে আসে।
এবাররের আসরে বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব এর ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন ফুয়াদ হাসান। ফুয়াদ হাসানের দক্ষ টিম সিলেকশনে এবার বিয়ানী বাজার স্পোর্টস ক্লাব খুবই সুগঠিত এবং আনপ্যারালাল একটি দল নিয়ে মাঠে নামে।
ডিপিএলের এবারের চ্যাম্পিয়নশীপের যাত্রা পথে প্রথম ম্যাচেই বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাবে কাছে অর্কিজ ক্রিকেট ক্লাব মাত্র ২৪ রানেই অল আউট হয়ে যায় ওবাদুল তুহিনের আর ক্যাপ্টেন তারেক আজিজের হাই প্রেসিং এ। জবাবে মাত্র দুই ওভারের বিয়ানীবাজার এক উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌছে দেন আফজাল।
দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে জেন্টুলম্যান ক্রিকেট ক্লাব আবারো তুহিন আজিজ এর পেস রোলিং তুপে পড়ে মাত্র ৪৬ রানে বুকড হয়ে যায়।জবাবে বিয়ানীবাজার কোন উইকেট না হারিয়েই লক্ষ্যে পৌছে যায়। আবারো ক্রিকেট পীচে উইলো ঝড় তুলেন আফজাল -কামরুল।
তৃতীয় ম্যাচে বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব মুখোমুখী হয় সিলেট গ্লডিয়েটর্স এর। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবার পথে এই এক্টি ম্যাচ শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয় বিয়ানী বাজার স্পোর্টস ক্লাব কে। প্রতিপক্ষের দেওয়া ৭১ রানের টার্গেট পাচঁ উইকেট হারিয়ে শেষ বলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জনির নেতৃত্বে বিয়ানী বাজার স্পোর্টস ক্লাব।
প্রথম প্লে-অফে সিলেট সানরাইজ এর দেওয়া ৮৫ রানের টার্গেট মাত্র পাঁচ ওভারে বুস্টার ওভার ছাড়াই টপকে যায় রেদওয়ানের সুপার হিটিং এর বদৌলতে বিয়ানী বাজার। উল্লেখ্য প্লে অফ থেকে ব্যাটিং দলের জন্য এক্টি ওভার চুজ করার অপসন রাখা হয় বাইলজে। এখনে প্রতিটি রান ই ডাবল হিসাবে কাউন্ট করা হয়। ক্রিকেটে ছক্কা কে এই ওভারে ১২ হিসাবে গননা করা হয়। বিয়ানী বাজার স্পোর্টস ক্লাবের ফেয়ারলেস ব্যাটিং এ বুস্টার ওভার নেওয়া প্রয়োজন ই মনে করেননি রেদওয়ান। ম্যাক্সিকান ওয়েভ ছড়িয়ে দেন পুরো গ্যালারিতে।
অতঃপর সেই বহুল প্রত্যাশীত ফাইনাল। আলো স্বল্পতার কারণে ফাইনাল ম্যাচটি কার্টেল ওভারে নিয়ে আসা হয়। পাচঁ ওভারে।
প্রথম প্লে অফের প্রতিপক্ষ সিলেট গ্লডিয়েটর্স কে ব্যাটিং পাঠিয়ে মাত্র ৪৮ রানে আটকে দেয় ম্যান অব দ্যা ফাইনাল ওবাদুল এর নেতৃত্বে পেস ব্যাটারী।
বিয়ানীবাজার স্পোর্টিং ক্লাব সেই রান ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট আফজলের উইলো ঝড়ে টপকে যায় মাত্র দুই ওভারে।
প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ছিলো মনসুর -মারুফের সিলেট গ্লডিয়েটর্স।
এবার দুজন আলাদা দুটি দল নিয়ে অংশ নেন এই আসরে। বিয়ানী বাজার স্পোর্টিং ক্লাব গত আসরের দুই চ্যাম্পিয়নের দলকে হারিয়ে নিজেদের আনবিটেন চ্যাম্পিয়ন টাইটেল অর্জন করে।
প্রতিটি দলকে পেস ঝড়ে ধসিয়ে দিয়েছে এই স্কোয়াড; এবং ব্যাটিং এ দেখিয়েছে মুন্সিয়ানা। ক্যালকুলেটিভ এট্যাক। প্রতিটি ম্যাচেই রান চেজ করেছে ক্যালকুলেটিভ ম্যানেজার ফুয়াদ আজিজের কেমেস্টিতে।
বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব টরেন্টো এর এবারের স্কোয়াডের — রেক আজিজ- আফজল -কামরুল -জাহির -তুহিন -আনোয়ার -রেদওয়ান -জনি -হ্নদয় -মাহিন -নিশাত সহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ক্লাব ডিরেক্টর আরাফাত বকসি সুমন।
ক্লাব কোর্ডিনেটর সায়েম জানান -এই সাফল্য অর্জনের পথে আমাদের কঠিন যাত্রাপথে অনেক মুখোশধারীদের পরাস্থ করেই তবে আমাদের মাঠে নামতে হয়েছে। এই বিজয় আমাদের সকল শুভাকাংখিদের প্রতি উৎসর্গ করতেছি।স্পেশালী আমাদের সাবেক ক্যাপ্টেন মনসুর। যার নেতৃত্বে আমরা জিতেছিলাম প্রথম বাংলাদেশ কাপ শিরোপা।
মাশরুল রিপন জানান -বিয়ানী বাজার শব্দ শুনলেই জেগি উঠি এগিয়ে আসি। আমাদের এই তারুন্যের জন্য গর্বে বুক ভরে উঠে।সাবেক প্লেয়ার আকিব জানান -ব্যাট বলের শব্দ শুনার মাঝে যে আনন্দ সেটা এবার বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব প্রতিটি ম্যাচেই করে দেখিয়েছে।মনে হচ্ছে পিএসজি মাঠে আছি।
কানাডাতে বসবাসরত বাংলাদেশের জাতীয় ধারাভাষ্যকার মাসুদ করিম। উনার ধারাভাষ্যের সুললিত কন্ঠে যখন বারংবার বলছিলেন – এটা টরেন্টোর কর্ভেট মাঠ মনে হচ্ছে না ; মনে হচ্ছে এটা বিয়ানীবাজারের পিএইচজি মাঠ।
পুরো গ্যালারী ও যেনো হয়ে উঠেছে বিয়ানীবাজার।
মাঠের এই ধারাভাষ্য বারবার মনে করিয়ে দেয় তারুণ্যের হাতেই বিয়ানীবাজারের আগামীর পতাকা। এই তারুণ্যরাই বিয়ানীবাজারের পালস- নিউক্লিয়াস ।
তাদের হাতেই রচিত হবে বিজয়ের নিশান। ঘুনেধরা -পিছুহটা- মোড়লিত্তের আমলের শিকল ভেঙ্গে বিয়ানীবাজারের তরুণরা জানান দিচ্ছে- আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সবচাইতে নিখাদ আনন্দদায়ী ইভেন্ট হলো স্পোর্টস। আর সেই স্পোর্টসের পতাকা হাতে নিয়েই বিয়ানীবাজার স্পোর্টস ক্লাব বারংবার জানান দিচ্ছে – উই আর নাম্বার ওয়ান। আমরাই চ্যাম্পিয়ন। রিমেম্বার দ্যা নেইম – বিয়ানী বাজার স্পোর্টস ক্লাব টরেন্টো।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1.1K বার