স্টাফ রিপোর্টার:
সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের শুরুর দিন আজ সকাল থেকে সিলেট মহানগরে যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে দোকান-পাট খোলা শুরু করলেও সিলেটে আজ চিত্র ছিলো ভিন্ন।
সকাল ১০ টার দিকে মহানগরের বন্দরবাজারে কোনো মার্কেট বা দোকান খোলা দেখা যায়নি। এছাড়া এসময় অন্যান্য দিন সড়কে কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা চোখে পড়লেও আজ এমন দৃশ্য ছিলো না। সড়কে যানবাহনও ছিলো কম।
আন্দোলনের সমন্বয়ক জানিয়েছেন- অসহযোগ আন্দোলনের সময় হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, জরুরি পরিবহন সেবা (ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন), অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট-সেবা, জরুরি ত্রাণসহায়তা ও এ খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
তবে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক কোনো কর বা খাজনা দেবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা-সেমিনার ও আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।’
তারা আরও বলেন, ‘দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাই-বোনেরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকেরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন দায়িত্ব ছাড়া কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা-পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও উপকূলীয় এলাকায় থাকবে।’
এছাড়া আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না। জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, তার জন্য সব অফশোর লেনদেন বন্ধ থাকবে। বিলাসদ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এদিকে, সিলেটে এই আন্দোলন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ২০ দিন ধরে চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এই পর্যন্ত আন্দোলনে সিলেটের দুজন মারা গেছেন। একজন সাংবাদিক ও অপরজন বিদ্যুৎ কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ কর্মকর্তা যুবক শুক্রবার হবিগঞ্জে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধি হয়ে মারা গেছেন। এ অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের খেঁটে খাওয়া মানুষ আরও বিপদে পড়বেন বলে তাদের মন্তব্য।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক বলেন- কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী অসহযোগ আন্দোলন পালনে আমরা রবিবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিবো। পরে নগরের কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবো। জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া আর সরকারি-বেসরকারি কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।’
সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম শনিবার বলেন- ‘আমাদের গণপরিবহন শ্রমিকরা পরিস্থিতি দেখে যানবাহন নিয়ে বের হবে। সড়কে বেরিয়ে যদি জীবন হুমকির পড়ে তবে গণপরিবহন বন্ধই রাখতে হবে। আর যদি চলাচলের পরিবেশ থাকে তবে গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হবে।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার