এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
প্রিয় দেশবাসী,
আস্সালামু-আলাইকুম। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও নির্যাতনের পর দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৃত পক্ষে স্বাধীনতা লাভ করেছে। নতুন প্রজন্ম সহ আমরা কেহ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু ২০২৪ সালে একক নেতার নেতৃত্ব ব্যতিত সাধারন ছাত্রজনতা ও জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে মাত্র ৩৬ দিনে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছেন। সেজন্য তাদের সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। কিভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তা কিন্তু সাধারন ছাত্ররা দেখিয়ে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তাহার বেশীরভাগই ছাত্রদের দ্বারা অর্জিত হয়েছে।
যেমনটি বলা যায়, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৯০, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে সাধারন ছাত্রদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে গন অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু তাহাদের বিশাল অর্জনকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ও তাহাদের কে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে, নিয়মিত ছাত্রদের দ্বারা ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠন করতে হবে। এ কমিটির প্রধান কাজ, যেখানেই অন্যায় সেখানেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রিয় দেশবাসী,
ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় মাত্র একজন রোগীই মৃত্যুবরন করে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বে একটি ভূল করলে, গোটা দেশের ক্ষতি হয়। যেমন: একটি কথার কারনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছাড়তে হল। দল এবং দেশের ক্ষতি হল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতিথ থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে নাই। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দাম্বিকতা ও অহংকার চলে আসে। আর এই অহংকারের বলি হয়েছেন, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমেলদা মার্কোস, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট বীক্রমা সিং, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। “ আলো বলে অন্ধকার, তুই বড় কাল, অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো।” এর তাৎপর্য ভূলে গেলে, যে কোন অর্জনই বিলীন হতে বাধ্য।
প্রিয় ছাত্র জনতা,
আপনাদের এ বিশাল অর্জনকে ধরে রাখতে হলে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরছি:
প্রথমত: ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। এ কথাটি মনে রাখতে হবে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা বড়ই কঠিন।
দ্বিতীয়ত: অসাধু ও দুবৃত্তরা বসে নেই। শয়তান কখনও দৃশ্যমান হয় না। শয়তান কিন্তু অতি সহজেই প্রতিটি মানুষের শিরা উপশিরায় ডুকতে পারে। বাংলাদেশ বিশে^ ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত। শয়তান চাইবে, এ সম্প্রীতি নষ্ট করতে। একেই বলে, তৃতীয় পক্ষ বা শয়তান।
তৃতীয়ত: অফিস আদালত সহ বিভিন্ন স্থাপনা আমাদের সাধারন জনগনের। এসব প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা যাবে না। শয়তান চাইবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে, তাহাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রদেরকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে।
চতুর্থত: সরকার গঠনের পর অভিজ্ঞদের দ্বারা আগামী ১০০ বৎসর কি কি করতে হবে, তাহার কর্ম পরিকল্পনা মেমরেন্ডাম হিসাবে সরকারের নিকট আনুষ্টানিক ভাবে পেশ করতে হবে। সংবিধানের আদলে সরকারের নিকট এ মেমরেন্ডমটি থাকবে। মেমরেন্ডামের বিষয়বস্তু জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করে, দেশবাসীকে জানাতে হবে। মেমরেন্ডামে থাকতে হবে, বিগত ১০০ বৎসরের ব্যর্র্থতার। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই ব্যর্থতা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক হিসাবে। কারন ছাত্ররা নিষ্পাপ। নিষ্পাপদের আকুতি, কোন দিন ব্যর্থ হয় নাই, হবেও না। এই মেমরেন্ডাম হবে সাধারন ছাত্র জনতার “ মেঘনা কার্টা”।
পঞ্চমত: জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যান, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও বিশেষ উদ্দেশ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যাদেরকে নির্বাচনের নামে প্রহশনের মাধ্যমে নির্বাচিত বা নিয়োগকৃত করা হইয়াছে, তাদের পদ পদবি বিলুপ্ত করতে হবে। কারন এসব প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ দলের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে বসে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে থাকেন। যা কিছুতেই কাম্য নহে। রাষ্ট্রকে অহেতুক হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যক্তিগত ভরন পোষনের জন্য ব্যয় করতে হয়। যাহা রাষ্ট্র কোষাগারের টাকা তছরুফের শামিল।
ষষ্ঠত: বিভাগকে প্রাদেশিক সরকারের আদলে প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করতে হবে। কেন্দ্র শাসিত সরকারের বদলে প্রাদেশিক সরকার শাসিত ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জরগনের সেবা নিশ্চিত করতে হলে, প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরন করতে হবে। কেন্দ্র শাসিত সরকার থেকে কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহন করতে হলে, সাধারন জনগনকে প্রচুর টাকা ও সময় ব্যয় করে কেন্দ্রের সেবা পেতে হয়। যাহা কিছুতেই কাম্য নহে। শুধু জাতীয় বিষয়াদী ব্যতিত সকল কাজ প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
সপ্তমত: ২০২৪ সালে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা স্বৈরাচারের ক্ষমতা দখল মুক্ত করতে গিয়ে, যাহারা শহীদ হয়েছেন, তাহাদেরকে বীর শ্রেষ্ট, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় উপাধিতে ভূষিত করতে হবে। এসব শহীদ ও আহতদের নামের তালিকা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত করতে হবে। যাহা মেমরেন্ডামে সন্নিবেশীত থাকতে হবে। এসব শহীদ বা আহতদের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, এসব শহীদদের হত্যা বা আহত করতে পুলিশ বাহিনী এ তান্ডব চালিয়েছে। এসব পুলিশদের পিতা মাতা স্থায়ী ঠিকানা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই বাচাই করতে হবে। যদি যাচাই বাচাই কালে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি কোন অনিয়ম ধরা পড়ে, দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কথিত আছে, বিশেষ দেশের নাগরিক বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি করিতেছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
অষ্টমত: বর্তমানে অন্তবর্তী বা জাতীয় সরকার গঠন হইয়াছে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কাজ, আইনশৃংখলার উন্নতি, রাষ্ট্র মেরামত তথা বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। পূর্বের সরকারের চুক্তিভিত্তিক বা রাজনৈতিক বিবেচনায় যাদেরকে নিয়োগ প্রদান করা হইয়াছে, তাহা বাতিল করতে হবে। স্ব-স্ব বিভাগ স্বাধীন থেকে নিজ নিজ বিভাগের জবাবদিহি নি:শ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়াদী মেমরেন্ডামের আলোকে বর্তমান সরকার বিধি প্রনয়ন করে পরিপত্র জারী করবেন। যাহা পরবর্তীতে পবিত্র সংসদের দুই তৃতিয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে আইনে রুপান্তরিত করতে হবে। অন্তবর্তী সরকার, রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, প্রথম অধিবেশনেই সকল কার্যক্রম সংসদ কর্তৃক অনুমোদন করিয়া নিতে হবে। অন্তবর্তী সরকারের সকল কাজকে, রাজনৈতিক সরকার অনুমোদন দিতে বাধ্য থাকিবেন। এ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ছাত্রজনতা সবসময় চোখ, কান, খোলা রাখতে হবে।
লেখক: সভাপতি, সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক বিয়ানীবাজার, সিলেট।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার