Daily Jalalabadi

  সিলেট     শনিবার, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতি বন্ধের আওয়াজ

admin

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ০৮:০২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ০৮:০২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতি বন্ধের আওয়াজ

স্টাফ রিপোর্টার:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন সিলেটসহ সারা দেশে পাল্টে দিচ্ছে অনেক কিছু। হাসিনা সরকার পতনের পর সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)-সহ কয়েকটি ভার্সিটিতে পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য-উপউপাচার্য-প্রক্টোররা।

এবার সিলেটের কলেজ-ভার্সিটিতে দলীয় বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি তুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে দলীয় রাজনীতি বন্ধে কঠোর হয়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। শাবি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজে সাধারণ ছাত্ররা জোর দাবি জানাচ্ছে সকল ধরনের দলীয় বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কদের প্রস্তাবিত অন্তবর্তীকালীন সরকারও গঠন হয়েছে। কিন্তু অনেক ভার্সিটি-কলেজে বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থী-আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকলকে দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

জানা গেছে, সরকার পতনের পর সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা দলীয় রাজনীতি বন্ধের জোর দাবি তুলেন। যদিও ১৯৯৪ সালে এ কলেজ ক্যাম্পাসে এমন রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিগত সরকারগুলোর আমলে রাজিনৈতিক ছাত্র-সংগঠনগুলো- বিশেষ করে ছাত্রলীগ দাপিয়ে বেড়াতো। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় ৫ আগস্ট পতন হয় হাসিনা সরকারের। এরপরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফের দাবি তুলেন- ক্যাম্পাসে দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বুধবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- আগামীতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে কেউ দলীয় রাজনীতির চর্চা করলে তাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

এ বিষয়ে রবিবার (১৮ আগস্ট) বিকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন- ১৯৯৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মেডিকেলে ছাত্ররাজনীতিসহ সব রাজনীতি বন্ধ রয়েছে। তবে বিগত সময়ে একটি রাজিনৈতিক ছাত্র-সংগঠন কিছুটা সক্রিয় ছিলো। তবে এসব আর হতে দেওয়া হবে না।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৪টি দাবিতে আন্দোলন করছে। রবিবারও তারা এসব দাবি পূরণের জন্য মানববন্ধন করেছে। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল সদস্যদের দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক সকল ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

রবিবার মানববনন্ধকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান- রাজনীতি বন্ধসহ চার দফা দাবি বাস্তবায়নে সোমবার (১৯ আগস্ট) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। এ সময়ের মধ্যে দাবিগুলো ভার্সিটি প্রশাসন পূরণ না করলে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদে তালা দিয়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অপরদিকে, সিলেটের শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসেও দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার, অসহযোগ ও সর্বশেষ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে

সিলেটে লিডিংয়ে ছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ভার্সিটিতে ৬-৭ জন সমন্বয়ক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক।

শাবিপ্রবি’র অন্যতম সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম রবিবার সন্ধ্যায় বলেন- আমরা ইতোমধ্যে প্রশাসনের কাছে এ দাবি লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কার্যত এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসন নেই। আশা করি নতুন ভিসি আসলে আমাদের দাবিকে মূল্যায়ন করবেন। এছাড়াও আমরা আর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী অপরাজনীতি হতে দিবো না।

এগুলো ছাড়াও সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) এবং বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

মদন মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন- ‘ছাত্র-রাজনীতির স্বর্ণালী ইতিহাসে দেখা যায়- ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ১১ ও ৬ দফা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। তখন তারা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দ্বারা প্রভাবিত ছিলো না। কিন্তু এখন ছাত্র-সংগঠনগুলো তাদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তারা তাদের গৌরবোজ্জ্বল সময় হারিয়ে গণরাজনীতির কাছে সারেন্টার করেছে। ফলে তারা রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক আহ্বানে সাড়া দেয়। অথচ রাজনীতির জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের একটি নিজস্ব গন্ডি ও নির্দিষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে। এর বাইরে যাওয়াতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন- ‘চলমান পরিস্থিতিতে উত্থাপিত দাবি অন্যায্য নয়। শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বলয় থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।’

উল্লেখ্য, গত বেশ কয়েক বছর ধরে সিলেটে খুন, চুরি, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি ও নিজেদের মধ্যে মারামারি সহ বড় বড় অপরাধকাণ্ডে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। এমসি কলেজের হোস্টেলে ছাত্রলীগ নেতাকমীরা নারীকে করেছে সংঘবব্ধ ধর্ষণ। সর্বশেষ সিলেটে ছাত্রলীগের চিনি চোরাকারবার নিয়ে সারা দেশে হয়েছে তোলপাড়। তাদের কাছে খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাই ছিলেন অসহায়। কেন্দ্রে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও সুরাহা মিলেনি। তাদের মদদ দিচ্ছিলো প্রশাসনের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অবশেষে হাসিনা সরকার পতনের পর সিলেট হয়েছে ছাত্রলীগশূন্য।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন