স্টাফ রিপোর্টার:
দেশজুড়ে চলছে যৌথবাহিনীর তৎপরতা। ধরা পড়ছেন অপরাধীরা। এর মধ্যেও সিলেটে বেপরোয়া চোরাকারবারীরা। বিভিন্ন কৌশলে আইনশৃঙ্খলা ও যৌথবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে। কখনো সীমান্ত এলাকায় মজুদ করে সুযোগ বুঝে তা শহরে নিয়ে আসছে। আবার কখনো পণ্য পরিবহনে তারা নিচ্ছে অভিনব কৌশল। বালু ও পাথরচাপা দিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে আসছে চিনি, কাপড়, ঔষধ ও কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন ধরণের ভারতীয় পণ্য। চলতি মাসে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আনা অন্তত ১০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ হয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী ও যৌথবাহিনীর অভিযানে।
ভারতীয় পণ্যের একটি চালানটি ধরা পড়ে শুক্রবার ভোরে। ওইদিন সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজারের কাছে ট্রাক ভর্তি ভারতীয় পণ্য জব্দ করে যৌথবাহিনী। সেনাবাহিনীর টহল দল একটি ডিআই ট্রাক আটক করলে পুলিশ গিয়ে ভারতীয় কাপড়ের চালানটি জব্দ করে। জব্দকৃত ভারতীয় কাপড়ের মধ্যে ছিল ৬২২ পিস শাড়ী, ১৩২ পিস থ্রি-পিস, ৬৪ বান্ডেল থান কাপড় ও ৩৭৫ গজ থান কাপড়। জব্দকৃত কাপড়ের মূল্য কোটি টাকা হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনীর টহল দল ভারতীয় পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক আটক করে। পরে পুলিশ গিয়ে পণ্যগুলো জব্দ করে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। চোরাচালানের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সুরমা বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০০ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করে বিজিবি। বালু চাপা দিয়ে ট্রাকে করে চিনির বস্তাগুলো নিয়ে যাচ্ছিল চোরাকারবারিরা। উদ্ধারকৃত চিনির বাজার মূল্য ২২ লাখ টাকার উপরে। এর আগের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর কানাইঘাটের চতুল ঈদগাহ বাজার এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি-পিস জব্দ করে। এই চালানটিও ট্রাকে বালুচাপা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল চোরাকারবারিরা।
১২ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর কালিঘাট থেকে ৮৫ বস্তা চিনি জব্দ করে পুলিশ। একটি ট্রাকে বালুচাপা দেওয়া অবস্থায় প্রায় সোয়া ৬ লাখ টাকা মূল্যের এই চিনি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। একই দিন দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে ২ কোটি ১১ লাখ টাক মূল্যের সুপারি, রসুন ও মাছ জব্দ করা হয়।
১০ সেপ্টেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৯০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য জব্দ করে বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল- -১৩ হাজার ৯৯৭ পিস স্কিন সান ক্রিম, ১৭ হাজার ৭৬৬ পিস চশমা, ৬৪৮ পিস ভারতীয় মুভ স্প্রে, -১ হাজার ৩৭ পিস জনসন ক্রিম, ১ হাজার ৭১০ পিস হোয়াইট টন ক্রিম, ৫০ পিস কাতান শাড়ী, ১৭৮ কেজি পোস্তদানা ও ২৪০ কেজি চা পাতা।
৯ সেপ্টেম্বর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পীরেরবাজার এলাকায় বালু চাপা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ৩০০ বস্তা ভারতীয় চিনি ভর্তি ট্রাক জব্দ করা হয়। এসময় আটক করা হয় ৩ জনকে। ৫ সেপ্টেম্বর জৈন্তাপুর উপজেলার বিরাইমারা ব্রিজ সীমান্ত এলাকা হতে ৬৭টি ভারতীয় মহিষ আটক করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
৩ সেপ্টেম্বর ছাতকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কাভার্ডভ্যান ভর্তি ১ কোটি ত্রিশ লাখ টাকা মুল্যের বিভিন্ন ধরণের ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল- বিস্কুট, ঔষধ ও মোবাইল ফোন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, চোরাচালান পণ্য যাতে মহানগরীর ভেতর প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সর্তক রয়েছে। চোরাকারবারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলেও পুলিশ সতর্ক থাকায় পার পাওয়া কঠিন। যখনই চোরাচালানের খবর পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষনিক অভিযান চালানো হচ্ছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার