আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের দিল্লিতে সঙ্গিনীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেয় প্রেমিক। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। খুন করে দেহ ফ্রিজে রাখার পর একেবারে নির্দোষ সেজে অন্য নারীকে বিয়েও করে ওই যুবক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওই রোমিওকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত প্রেমিকের নাম সাহিল। দিল্লির নজফগঢ়ের মিত্রাও গ্রামের বাসিন্দা সাহিল ২২ বছরের তরুণী নিকিকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পর দেহ টুকরো টুকরো করে। তারপর সেই টুকরো টুকরো দেহাংশ দিল্লি সীমান্তের বাইরে মিত্রাও গ্রামে নিজের রেস্টুরেন্টের ফ্রিজে সংরক্ষিত করে রাখে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাটি ঘটলেও প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। এদিনই অভিযুক্ত রোমিওকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মিত্রাও গ্রামের বাসিন্দা সাহিল ও হরিয়ানার ঝর্জ্ঝরের বাসিন্দা নিকির মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৮ সালে উত্তমনগর এলাকায় একটি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকেই তারা একসঙ্গে থাকতেন। গ্রেটার নয়ডায় একই কলেজে পড়াশোনা করতেন তারা। কলেজের পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। এরপর করোনা মহামারির সময়ে লকডাউনে তারা নিজেদের বাড়ি ফিরে গেলেও লকডাউন শেষে ফের একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। দ্বারকা এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন তারা।
নিকির সঙ্গে লিভ-ইনে থাকলেও শাহিল কখনো তার বাড়িতে এই সম্পর্কের কথা জানাননি। ফলে সাহিলের অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে পরিবার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তার বিয়ের দিন ছিল।
সাহিলের বিয়ের আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি জানতে পারেন নিকি। প্রেমিকের এই আচরণ, প্রেমিকের অন্য কোথাও বিয়ে করতে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তিনি। ফলে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সাহিলের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। সেই রাতে কাশ্মীরি গেটের কাছে একটি বাড়িতে ছিলেন তারা। সেখানেই সাহিল তার মোবাইলের ডেটা ক্যাবল দিয়ে নিকির গলা পেঁচিয়ে, শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করে বলে অভিযোগ।
মিত্রাও গ্রামে সাহিলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট ছিল। নিকিকে খুন করার পর ঘটনাটি গোপন করতে তার দেহ টুকরো টুকরো করে ওই রেস্টুরেন্টের ফ্রিজে রেখে দেয় সাহিল। তারপর সে একেবারে ভাল ছেলের মতো বাড়ি ফিরে যায় এবং পরিবারের দেখা মেয়েকে বিয়েও করে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ভ্যালেন্টাইন ডে-তেই তার কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসে এবং সাহিলকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে দিল্লির নৃশংস হত্যাকাণ্ড শ্রদ্ধা ওয়াকারের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা শ্রদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে প্রেমিক আফতাব পুনাওয়ালার সঙ্গে লিভ-ইনে ছিলেন। তারপর সেই প্রেমিকের হাতেই নৃশংস পরিণতি হয় তার। শ্রদ্ধাকে খুন করে তার দেহ ৩৫ টুকরো করে দীর্ঘদিন বাড়ির ফ্রিজে সংরক্ষিত করে রেখেছিল আফতাব। প্রেমিকার দেহাংশ সংরক্ষণের জন্য ৩০০ লিটারের নতুন ফ্রিজও কিনেছিল আফতাব। দীর্ঘদিন সেখানে শ্রদ্ধার দেহাংশ সংরক্ষিত ছিল। তারপর সেগুলো জঙ্গলে ফেলে দেয় আফতাব। অবশেষে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর গত ১২ নভেম্বর দিল্লি পুলিশ আফতাবকে গ্রেপ্তার করে এবং গ্রেপ্তারির ৭৫ দিন পর ৬ হাজার ৬৩৬ পাতার চার্জশিট আদালতে পেশ করে। পুলিশি জেরায় শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধাকে নৃশংশভাবে হত্যা করে দেহ টুকরো টুকরো করার কথা স্বীকারও করেছে আফতাব।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার