স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটে এতোদিন আত্মগোপনে থেকেও অনেকটা স্বস্তিতে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তুধরপাকড় জোরদার হওয়ায় সিলেট জেলা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে শুরু করেছেন তারা। জেলার বাইরে গিয়েও নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ফলে কেউ কেউ দেশ ছাড়ারও পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
৫ আগস্ট পূর্ববর্তী বিভিন্ন স্থান ও সময়ে সিলেটে সংগঠিত হামলা ও নাশকতার ঘটনায় সিলেটে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েক শ’ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরপরই দলটির সকল স্তরের নেতাকর্মী গা ঢাকা দেন।
সিলেটের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই চলে যান ভারতে। সেখান থেকে কেউ কেউ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যান।
যারা দেশে ছিলেন তাদের বেশিরভাগ সিলেটেই আত্মগোপনে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা খুব বেশি না থাকায় আত্মগোপনে থেকেও কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন তারা। কিন্তু গেল প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশেষ করে র্যাবের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে অনেকে সিলেট ছেড়ে পালিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন সিলেটের বাইরে।
তবে জেলা ছেড়েও রেহাই মিলছে না তাদের। নিজেদের বিভিন্ন ইউনিটের সহায়তায় বিভিন্ন জেলা থেকে আত্মগোপনে থাকা আসামীদের গ্রেফতার করে সিলেট নিয়ে আসছে র্যাব-৯।
গত কয়েকদিনে সিলেট জেলা ও বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের আলোচিত কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। এর মধ্যে গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানা এলাকা থেকে র্যাব-১৪ এর সহযোগিতায় শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় (শাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯। তিনি শাবি ছাত্র রুদ্র সেন হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামী।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে শাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান সজিবকে নরসিংদী জেলার রায়পুরা এলাকা থেকে র্যাব-১১ এর সহযোগিতায় গ্রেফতার করে র্যাব-৯। সজিবও রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামী। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ছাত্রলীগের দাপুটে এ দুই নেতা সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান।
গত শনিবার সিলেট নগরীর শেখঘাট কলাপাড়া এলাকা থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মাসুককে গ্রেফতার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিহুর রহমান সোহেল।
এর একদিন আগে শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের কাশেমনগর এলাকার শ^শুরবাড়ি থেকে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এইচ ইলিয়াছি দিনারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্র জানায়, সিলেটে ধরপাকড় জোরদার হওয়ায় দিনার বড়লেখায় শ^শুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।
এছাড়া ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামিম আহমদ, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ ও মহানগর যুবলীগ নেতা মো. রেদওয়ান আহমদ বাপ্পি।
এদিকে, সিলেটে ধরপাকড় জোরদার হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। আবার যাদের পাসপোর্টে অন্য দেশের ভিসা রয়েছে তারাও দেশ ছাড়ার নিরাপদ উপায় খুঁজছেন বলে সূত্র জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আসামীদের অনেকেই শহর ছেড়ে পালিয়েছে। পুলিশ আসামীদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার