স্টাফ রিপোর্টার:
শাহজালাল বিজ্ঞানপ্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে অল্প কিছুদিন আগে চাকরিতে যোগ দেন তাসনিম জাহান (আইরিন) (২৪)। পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য কথাবার্তাও চলছিল। কিন্তু বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার পথে বাসের চাপায় নিহত হন তাসনিম। এই ঘটনায় আহত হন তার বড় বোন নুসরাত জাহান (২৮)। তারা দুই বোন তিনি ‘নেক্সট ভেনচার’ নামে একটি আর্থিক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা করেছেন নিহতের বাবা স্কুল শিক্ষক (অব.) সাইফুল আলম সগির। এরপর অভিযান চালিয়ে বাসের চালক মিলন হোসেন মিন্টুকে আটক করেছে থানা পুলিশ। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে। বাসের সহকারীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানা যায়, নিহত তাসলিম পরিবারের সঙ্গে মিরপুর পলাশনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার মানিকখালী। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থনে তাঁকে দাফন করা হবে। বিকেল ৪টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। এরপর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় স্বজনরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড্ডা প্রগতি সরণি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় ‘আকাশ পরিবহনের’ দুটি বাসের পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাসলিম। আহত নুসরাতকে চিকিৎসা শেষে বাসায় নেওয়া হয়েছে।
নিহতের ফুফাতো ভাই শেখ রফিক আহমেদ বলেন, ভাই–বোনদের মধ্যে তাসলিম সবার ছোট। খুবই মেধাবী তাসনিম শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে চাকরি শুরু করেন। ওর কত স্বপ্ন ছিল! আজকে ঘাতক বাসের চাপায় নির্মমভাবে মারা গেল। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
নিহত তাসনিমের বাবা সাইফুল আলম বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে এক ছেলে। এর মধ্যে দুই মেয়ে চাকরি করত বাড্ডায়। তারা সকালে বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়েছিল। পরে শুনতে পাই, তারা দুজনেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।’
বাড্ডা থানার এসআই ফাতেমা সিদ্দিকা সোমা বলেন, বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে দুই বোন মধ্য বাড্ডায় প্রগতি সরণিতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় আকাশ পরিবহনের দুটি বাস একটির সঙ্গে আরেকটি প্রতিযোগিতা করছিল। একটি বাসের ধাক্কায় তাসনিম ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর বড় বোন নুসরাতকে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় দুটি বাস জব্দ এবং একটি বাসের চালককে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই বাসটি জব্দ করা গেলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। পরে চালককে আটক করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান, ওই ঘটনার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেনচারের কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে বাড্ডা থেকে মালিবাগ আসা ও যাওয়ার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টাখানেক রাস্তা বন্ধ থাকার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার