স্টাফ রিপোর্টার:
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও মাদক নির্মূলে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই কিংবা ডাকাতি মামলার আসামি, অবৈধ অস্ত্রের জোগানদাতা, মাদক কারবারে জড়িতদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে ডিএমপি।
ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত চার দিন পরিস্থিতি বেশি খারাপ ছিল। এই সময়ে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজরা।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। তারপরেও মাঝেমধ্যে দুই-এক জায়গায় ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর আসছে গণমাধ্যমে। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেছেন, আমরা পূজার পর ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ মাদক এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সবগুলো নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করব।
আইজিপির এমন বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রতিটি জেলার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা নতুন কিছু করার চিন্তা করছেন। সবাই নিজের জেলাকে অপরাধমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রুখতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিএমপি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি সম্প্রতি ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলি চালানো এবং হামলাকারীদেরও ধরতে চায়। এজন্য চালানো হবে সাঁড়াশি অভিযান।
ডিএমপির সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীতে খুব শিগগির অভিযান শুরু করবেন ডিএমপি। এজন্য এলাকাভিত্তিক তালিকা করা হচ্ছে। তালিকায় ৫ আগস্ট ও তার আগে যারা ওইসব এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে তাদের নামও প্রাধান্য পাবে। তালিকা ধরে ধরে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালাবে পুলিশ। এক্ষেত্রে সহায়তা করবে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এই তালিকা প্রস্তুতের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। তারা মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন।
ডিএমপির সূত্র জানায়, যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে তাদের নাম তালিকায় প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও মানুষ হত্যাসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদেরও নাম থাকবে তালিকায়। সবমিলিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের নাম আসবে। আগে বিভিন্ন অপরাধে মামলা ছিল কিন্তু গ্রেফতার হয়নি তারাও তালিকায় থাকবেন।
ডিএমপির সূত্রটি জানায়, ডিএমপি ওসিদের কাছে এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা চাওয়া হচ্ছে। এ তালিকা ধরে অভিযান চালানো হবে। এজন্য তাদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হবে। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোন কোন পয়েন্টে এই ব্যবসা কাদের মাধ্যমে চলছে তারও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দারা। বিগত সময়ে কারা মাদক ব্যবসার নেতৃত্ব দিয়েছে এবং কারা কারা পৃষ্টপোষক ছিল সেসব গডফাদারদের নামও থাকবে তালিকায়। তাদেরও গ্রেফতারে কাজ করবে পুলিশ।
ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ আগস্ট ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী পিস্তল ও রাইফেল হাতে নিয়ে গুলি করেছেন, মানুষকে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তাদেরও নামের তালিকা হচ্ছে। অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট ও তার আগে যারা গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। কিছু গ্রেফতার হয়েছে তবে সেই সংখ্যা নগন্য। আমরা সেইসব সন্ত্রাসীদের ধরতে এখন মাঠে নামব। যাতে তারা কোনোভাবে পালাতে না পারেন।
ট্রাফিক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় হঠাৎ করেই যানজট বেড়েছে। বিষয়টিকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, ঢাকায় অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি বেড়েছে। ফলে এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিনের অভিযানে অবৈধ গাড়ি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জরিমানার শিকার হচ্ছে। কিন্তু এটি আরও জোরদার করতে ডিএমপির প্রতিটি ট্রাফিক ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রমকে সামনে আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অপরাধীদের ধরতে ডিএমপি শিগগির সাঁড়াশি অভিযান শুরু করবে কিন্তু তার আগেই ট্রাফিক বিভাগ অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছে। প্রতিদিন ঢাকার প্রতিটি প্রধান সড়কে এই যান ধরে জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যেনো না চলতে পারে তার জন্য চালককে হুঁশিয়ারিও করছেন ট্রাফিকের সদস্যরা।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা তালিকা ধরে অপরাধীদের গ্রেফতারে মাঠে নামব। খুব শিগগির আমাদের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। মাদক, কিশোর গ্যাং, ছিনতাই ও চাঁদাবাজদের তালিকা করা হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার