Daily Jalalabadi

  সিলেট     শনিবার, ১৬ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাদের সঙ্গে কিসের বৈঠক?

admin

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩ | ০৮:১৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩ | ০৮:১৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
তাদের সঙ্গে কিসের বৈঠক?

স্টাফ রিপোর্টার:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা করে আমাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপরও তাদের সাথে বৈঠকে বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে। কিন্তু তারা একের পর এক অপমান করে গেল। এত অপমানের পরও তাদের সঙ্গে কীসের বৈঠক?

সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে সংলাপ করেছি, রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ ছাড়া কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়েছে। এরপর নিজেরা সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’

‘১৫ আগস্ট আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারী; গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা; তারপরও তাদের সাথে বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেল, আমি গেলাম দেখতে। একজন সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাতে। আমাকে কীভাবে অপমানটা করল, আমার গাড়ি ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দিল না, বড় গেইট বন্ধ; টেলিফোন করে সময় নেওয়া হয়েছিল। আমি এসময় আসব, তারা কী করল, বড় গেইট বন্ধ করে দিল। পরে ছোট গেইটে গেলাম, আমার গাড়ি যাওয়ার পর সেটাও বন্ধ করে দিল। এত অপমানের পর তাদের সঙ্গে কীসের বৈঠক?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার পরিষ্কার কথা, যারা এটুকু ভদ্রতা জানে না তাদের সাথে বৈঠকের কী আছে? কেউ পারবেন বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের সাথে এভাবে বসে বৈঠক করতে? যেটুকু সহ্য করেছি দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে না। ’

‘খালেদা জিয়ার ভাই এসে, বোন এসে আমার কাছে আকুতি করল। এরপর আমি তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট। এত অপমানের পর তারা যে সহানুভূতি পেয়েছে, সেটা শুধু আমার কারণে।’

রোহিঙ্গারা বোঝা, এক কোটি বাংলাদেশিও ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বোঝা। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে এক কোটি শরণার্থী বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই কথাগুলো মনে করেই মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। মানুষের বিপদে তার পাশে থাকতে হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি।’

রোহিঙ্গাদের যুদ্ধকালীন আশ্রয় দেওয়া হয়েছে— জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের ওপর সকলের দৃষ্টি ছিল। সেটা অনেকটা কমে গেছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যে যুদ্ধ চলছে, সেদিকে সবার ফোকাস চলে গেছে। আমরা যেহেতু তাদের আশ্রয় দিয়েছিল, তাই দায়িত্বও আমাদের। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা কিন্তু ঝগড়া করতে যাইনি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু তাদের মধ্যে সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই বিশাল জনগোষ্ঠী, তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা সবকিছু…; তারপর এটা মনে রাখতে হবে যে প্রথম যখন রোহিঙ্গারা দেশে আসতে শুরু করল, প্রথম কয়েক মাস কিন্তু আমরা নিজেদের টাকায় তাদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা সবকিছু এককভাবেই করেছি। এরপর অন্যান্য দেশ সহযোগিতায় এগিয়ে এলে একটু সুবিধা হয়। আমি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে বলেছি, তাদের চেষ্টা চালানো উচিত যেন মিয়ানমারে তারা যায়। ভাসানচরে আমরা তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমরা চাই তারা যেন ভাসানচরে যায়। অন্তত তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগ তারা পাবে এবং ভালো একটা পরিবেশে থাকতে পারবে।’

রমজানে দ্রব্যমূল্যের কষ্ট লাঘবে যথাযথ ব্যবস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা এখন আর পরনির্ভরশীল নই। আমরা নিজেরাই এখন উৎপাদন করছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না। তবে কেউ খাদ্যপণ্য মজুত করে পচিয়ে ফেললে আমাদের তো কিছু করার থাকবে না। সেদিকে সাংবাদিকদেরও একটু নজর রাখতে হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্য নিয়ে সমস্যাটা হচ্ছে, দাম বেশি কমালে উৎপাদকদের লোকসান হবে। আবার দাম বেশি বাড়ালে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। এ জায়গায় সবসময় ব্যালেন্স করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা বিরোধীদলে থাকার সময়ও বসে থাকিনি। তখন আমরা ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে কাজ করেছি।

এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো চাপ নেই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ। আর উপরে আল্লাহ আছেন।’

তিনি বলেন, আমার বাবার আর্শীবাদের হাত আমার মাথায় ওপরে আছে। কাজেই কে কী চাপ দিল না দিল, তা নিয়ে আমার কিছু আসে যায় না।

‘জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে যা কিছু করার তা আমি করব। এরকম বহু চাপ আমাকে দেওয়া হয়েছিল। পদ্মসেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। অনেক চাপের পরও কিন্তু নিজেদের অর্থে আমরা পদ্মাসেতু বানিয়ে দেখিয়েছি।’

৭০ বছর বয়সেও একটা লোক এমডি থাকতে চায়, সেই চাপও শেখ হাসিনা সহ্য করেছে— মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি

আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সবসময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে ছিল, আওয়ামী লীগই প্রথম নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাধীন করে দিয়েছি। আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছি।

স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা চায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো করুণা বা দাক্ষিণ্য চায় না। বরং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ন্যায্য পাওনা চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরে কোভিড অতিমারি ও চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য নেওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। এক্ষেত্রে আমি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু অর্থায়ন প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষ প্রয়োজনের কথা তুলে ধরি।

বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ককে ঢেলে সাজানোর আহ্বান

বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দু’দেশের সরকারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসা ও বিনিয়োগ কমিটি এবং দু’দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে একটি যৌথ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব করেছি। এছাড়া আমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক গ্যাস অনুসন্ধান, জ্বালানি সঞ্চালন ব্যবস্থা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পর্যটন, স্টার্ট আপসহ বিভিন্ন খাতে কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চলমান আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরে আমি মিয়ানমারে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে আরও রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাই।

নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে

নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির স্থিতিশীলতার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আর ভোট কারচুপির সুযোগ নেই। আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা করে দিয়েছি। এনআইডি যুক্ত করা হয়েছে। ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। আমরা ইভিএমে ভোট করতে চেয়েছিলাম, অনেকে আপত্তি করেছেন। নির্বাচন কমিশন যতটা সম্ভব ইভিএম ব্যবহার করবে। ভোটাররা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট দেবেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটানা ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকার পরিচালনা করছি। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছি। এর মধ্যেও কিছু অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু এত দীর্ঘ সময়, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।

এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা। এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। এখনো ঘটছে, এসবের জন্য সাময়িক সমস্যা হতে পারে। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

ববির রাজনীতিতে আসা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে ববি রাজনীতিতে পা ফেললেন কি না— এমন আলোচনা শুরু হয়। দলের ভেতরে একেকজনকে একেক ধরনের কথা বলতেও শোনা যায়। অবশেষে এ বিষয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ববির শ্রদ্ধা নিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭ মার্চ ববির ফুল দিতে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। পরিবারের সদস্য হিসেবে ফুল দিয়েছে সে।’

 

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 998 বার

শেয়ার করুন