স্টাফ রিপোর্টার:
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি কোনো সংলাপ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমরাও কোনো সংলাপ করব না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গুলশান দলীয় চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিএনপি। সেই প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আর কোনো গ্রেপ্তার (বিএনপি কর্মীদের) হবে না, পুলিশি হয়রানি হবে না, গায়েবি মামলা হবে না। কিন্তু এর তিনদিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।’
‘কালকে অবৈধ ও স্বঘোষিত প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- কোনো চাপ নেই। এখানেই বোঝা যায় এই দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই। মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর চিন্তা তার নেই। এই চাপগুলো কোথা থেকে আসবে? কারণ গত নির্বাচনে তারা যত রকমের জালিয়াতি আছে ও যত রকমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে সেগুলোর মাধ্যমে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়ে ফল ঘোষণা করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় গেছে।’
‘এখন আজকে যখন সামনে আবার নির্বাচন আসছে, তারা যখন দেখছেন জনগণ তাদের সঙ্গে নেই, যদি সত্যিকার অর্থে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না, আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই কারণে তারা আগে থেকেই একটা অবস্থান তৈরি করছে যে, আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে বাইরে থেকে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না, কেউ কথা বলবে না, আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচন করব। যারাই যাচ্ছে (আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদেশি কূটনৈতিকদের বৈঠক) তারা বলছে, আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। কিন্তু তখন তারা বলছে, নির্বাচন কমিশন তো সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, তারা ফ্রি, তারা যা খুশি করতে পারবে। গত কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের লোকেরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও একই কথা বলেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- কার সঙ্গে কথা বলব, কার সঙ্গে সংলাপ করব। এটার রেজাল্ট কী? আমাদেরও (বিএনপি) প্রশ্ন একটাই, রেজাল্ট কী? আজকের এই প্রধানমন্ত্রী, তিনি যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক, তিনি সবার সামনে ওয়াদা করেছেন নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না, পুলিশ আর গ্রেপ্তার করবে না, কোনও মামলা দেবে না। নির্বাচন পর্যন্ত কোনো পুলিশি হয়রানি করা হবে না। তার তিনদিন পরেই পুলিশি নির্যাতনে সারাদেশের বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ঘর-বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। ঘরে ও রাস্তায় থাকতে পারেনি। আমি বিএনপির মহাসচিব…আমার গাড়িতে হামলা করা হয়েছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখেছে। আমার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিয়েছে পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এসব জিনিসগুলোর পর শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্রের রেজাল্ট কী? রেজাল্ট কী তা তো আপনি জানেন।’
তিনি বলেন, ‘তারপর তিনি কী করে আশা করেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারে থাকবেন আর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? আজকে শুধু বিএনপি নয় সমস্ত রাজনৈতিক দল বলছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এমনকি সিপিবিও বলেছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো তার সঙ্গে সংলাপ করব না। তার সঙ্গে সংলাপ করব কেন? তিনি তো কথা রাখেন না। সেজন্য আমরা সংলাপের কথা বলিনি। একবারের জন্য আমরা সংলাপের কথা বলিনি। যারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলায় নির্বাচনের আগে কারাগারে রাখে, ওই মামলা, এসব মামলায় সাতদিনের মধ্যে প্রত্যেকর জামিন হয়, কিন্তু তাকে (খালেদা জিয়া) জামিন দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়নি, এখন পর্যন্ত সেই নাটক চলছে। তাদের (আওয়ামী লীগ) একজন মন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করতে পারবেন, আরেকজন বলেন, নির্বাচনও করতে পারবেন। আবার আরেকজন বলেন, তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে এতোই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, মানুষের ভালোবাসা পেয়ে থাকেন, আপনি পদত্যাগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দায়িত্ব দেন। তারা একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে ও নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসবে আমরা মাথা পেতে নেব।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার