
নিউজ ডেস্ক:
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দুটি দেশ- ভারত ও পাকিস্তান। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা দৃশ্যমান। বহির্বিশ্বের কাছে ‘চিরশত্রু’র তকমাও পেয়েছে তারা। সীমান্তে নিয়মিত সংঘাত ও একাধিকবার বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়েছে দেশ দুটি। কাশ্মীর ইস্যু এই সংঘাতের প্রধান কারণ। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের একটি পর্যটনস্থলে নিরপরাধ মানুষের ওপর ঘটা সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে আবারও মুখোমুখী ভারত ও পাকিস্তান।
সন্ত্রাসী হামলার ওই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদ ‘ক্রস-বর্ডার টেরোরিজমে’ মদদ দিচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দেশ দুটি পরষ্পরের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। নয়াদিল্লি পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধের মত পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদও।
ভারতের পানি চুক্তি স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় রিতিমতো যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, সিন্ধুর পানি বন্ধ বা অন্যদিকে প্রবাহিত করার যেকোনো উদ্যোগকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এমন কিছু করা হলে ‘জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে’ এর প্রতিক্রিয়া জানাবে পাকিস্তান।
এদিকে ভারতও সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে বলে জানাচ্ছে সেদেশের গণমাধ্যমগুলো। দেশটি তার সমুদ্র ও আকাশপথে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পালা শুরু করেছে। উত্তেজনার মধ্যেই বৃহষ্পতিবার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ভারতের রাজনৈতিক মহলের অনেকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কেউকেউ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলছেন।
দুদেশের পাল্টাপাল্টি এমন অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। প্রতিবেশী বৈরী দুটি রাষ্ট্র আরও একবার বড় ধরণের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এমনকি লড়াইয়ে কে জয়ী হতে পারে, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তি নিয়ে। দু-দেশের সামরিক বাহিনীর আকার, কার হাতে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা যুদ্ধের ফল যে কারো জন্যই সুখকর হবেনা তা উভয় দেশই ভালোভাবে অনুধাবন করে। দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর দেশ। উভয়ের কাছেই রয়েছে বিধ্বংসী সব বোমা ও উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র। পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত, যা উভয় দেশের যে কোনো সীমানা পর্যন্ত অতিক্রম করে।
উভয় দেশই জানে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তা তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলবে, ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবি এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে নস্যাৎ করে দেবে। যুদ্ধ হলে কয়েক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে এবং সমগ্র অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। আর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সংঘাত পরমাণু যুদ্ধে রুপ নিলে তা সমগ্র ভূখন্ডকে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করবে। বড়বড় শহরগুলো পরমাণু হামলার টার্গেট হবে এবং মুহুর্তেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এই যুদ্ধে কেউই জিতবে না। যুদ্ধ দুটি দেশকেই পঙ্গু করে দেবে। আশপাশের অন্য দেশগুলোর ওপর এর মারাত্বক প্রভাব পড়বে। এমনকি সমগ্র বিশ্ব এই যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, শান্তির পথই একমাত্র সমাধান।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার