সম্পাদকীয়:
অপরাধ না করেও শেখ জাহিদের ২০ বছর ‘কনডেম সেলে’ কাটানোর বিষয়টি মেনে নেওয়া কষ্টকর। অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠের ‘কনডেম সেলে’ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে শেখ জাহিদ যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন; উপরন্তু তার জীবন থেকে যে মূল্যবান সময় হারিয়ে গেছে, কোনোকিছু দিয়েই সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, খুলনা জেলার রূপসা থানার নারিকেল চানপুর গ্রামের শেখ জাহিদ ১৯৯৪ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার এক নারীকে বিয়ে করার পর শ্বশুরবাড়ির পাশেই ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।
এরপর ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি তার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী ও কন্যা খুন হলে পরদিন তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন শ্বশুর। ২০০০ সালের শুরুর দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শেখ জাহিদ আর ওই বছরই বাগেরহাটের আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হলে ২০০৪ সালে সেখানেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর কারাগার থেকেই ২০০৪ সালে আপিল বিভাগে জেল পিটিশন করেন জাহিদ, যা ২০০৭ সালে জেল আপিল হিসাবে গণ্য হয়। এ ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগে ওই জেল আপিলের শুনানিকালে মামলায় নানা অসংগতি পাওয়া যায়। শুনানি শেষে স্ত্রী ও কন্যা হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওই বছরের ২৫ আগস্ট শেখ জাহিদ কারাগার থেকে মুক্তি পান। মামলার রায় থেকে প্রতীয়মান, এক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায় রয়েছে। তদন্তকারী ব্যক্তি বা সংস্থা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে দীর্ঘ ২০ বছর ‘নরক যন্ত্রণা’ ভোগ করতে হতো না। এ পরিপ্রেক্ষিতে কার গাফিলতিতে এমন একটি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্ঘাটন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
প্রায়ই নিরীহ মানুষকে আটক করে ঘুস বাণিজ্য ছাড়াও টাকার বিনিময়ে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ শোনা যায় কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। দেশের পুলিশ বাহিনীকে আমরা সবসময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা এবং নৈতিক মূল্যবোধই হোক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক। দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষের সংবিধান স্বীকৃত দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার পূরণ না হলে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়, তার ফল শুভ হয় না। তাই প্রত্যেক বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার