
ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
আধিপত্য ও জায়গা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী কালনীচর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত খালিদ মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার সকালে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। বিকালে কালনীচর নুরুল উলুম ইসলামীয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে জানাযা শেষে উত্তর কালনীচর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নিহতের লাশ দাফন করা হয়। তবে, এই ঘটনায় রবিবার বিকাল পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
সড়জমিনে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল শনিবার দুপুরে সংঘর্ষে খালিদ মিয়ার মৃত্যুর পর থমথমে অবস্তা বিরাজ করছে কালনীচর গ্রামে। পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে গ্রাম। নিহতের পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের একমাত্র উপার্যনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ খালিদ মিয়ার স্ত্রী নাছিমা বেগম। ৭ বছর বয়সী কন্যা সন্তান মাহিয়া, ৫ বছর বয়সী ছামিয়া, ২ বছর বয়সী পুত্র ফাহিম ও মাত্র ২ মাস বয়সী ছায়িমকে কাছে নিয়ে নিয়ে কান্নায় বিলাপ করছেন নাছিমা। সন্তানরা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কি হয়েছে। মাত্র দুই মাস বয়সী শিশু পুত্র ছায়িমকে জড়িয়ে ধরে নাছিমার বিলাপ চুখে পানি ঝড়াচ্ছে সবার। দুই ছেলে দুই মেয়ের জনক খালিদ মিয়া পেশায় ছিলেন কৃষক। স্বামী খুনের সুষ্ট বিচারের দাবি স্ত্রী নাছিমার। স্বামী হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ট বিচারে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী কালনীচর গ্রামে আধিপত্য ও জায়গা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন থেকে সংঘর্ষ,ভাংচুর, হামলা, মামলা ও লুটপাটের ঘটনায় উত্তপ্ত ও আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠেছে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর কালনীরচর গ্রাম। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে খালিদ মিয়া(৪৪) নিহত হন। তিনি একই গ্রামের তেরা মিয়ার পুত্র। এসময় উভয় পক্ষের প্রায় ২০জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের কালনীচর বাজারে একটি মার্কেটসহ বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল হক ছানু মিয়া ও গ্রামের(জগন্নাথপুর উপজেলার অংশ) লোকমান মিয়ার সাথে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল একই গ্রামের বিলাল মিয়া, মোবারক হোসেন মেন্দি মিয়া, জুনাইদ মিয়ার গুষ্টির মধ্যে। এই ঘটনায় একাধিক বার উভয় পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পুলিশ আহত হওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের থানায় ও আদালতে প্রায় এক ডজন মামলা চলমান রয়েছে। তার মধ্যে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়। দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করলেও ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। থানা পুলিশের নিষ্কৃয় অবস্থানে ক্রমেই গ্রামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরশনে স্থানীয় রাজনীতিবীদরাও বিষয়টি সমাধানে উদ্যোগ গ্রহন করেন। কিন্তু অবশেষে শনিবার দুপুরে আলী হোসেন জগন্নাথ পুর উপজেলার অংশে মাঠে গরু চড়াতে গেলে পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপুরে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় অস্ত্রের আঘাতে খালেদ মিয়া গুরুত্বর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঞা বলেন, নিহতের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরর প্রস্থতি চলছে। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বর্তমানে পরিস্তিতি শান্ত।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছিল কালনীচর গ্রাম। নির্বাচনী সহিংসতায় পৃথক সংঘর্ষে কালনীচর গ্রামে দুই ব্যক্তি নিহত হন।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার