
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৬ দিনে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের দায়িত্ববোধের অভাব। এছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, সংযোগ সড়ক, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, সড়কে অটোরিকশার অবাধ চলাচলের জন্য দুর্ঘটনা ব্যপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা যায়, দেশজুড়ে ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে সড়কে প্রাণহানি ঘটলেও সিলেট বিভাগে তুলনামূলকভাবে দুর্ঘটনার হার কম ছিলো। ১৮ দিনে সিলেট বিভাগজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিকেরও বেশি। এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে মূলত অতিরিক্ত যাত্রীবাহী যানবাহন, চালকের বেপরোয়া আচরণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে।
সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৬ দিনে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। এরমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সিলেটের জেলা-উপজেলার সংযোগ সড়কগুলোতে এই সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি ছিল।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্রে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-বিভাটেক) এইসকল গাড়িগুলোতে নিহতের সংখ্যা বেশি।
সর্বশেষ বুধবার (১৮ জুন) সিলেটে পৃথক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের মোগলাবাজার থানাধীন শ্রীরামপুর ও জকিগঞ্জের ইউনিয়ন অফিস বাজারে এই দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। এই দুর্ঘটনায় বর-কনেসহ মাইক্রোবাস ও টমটমের ১২জন যাত্রী আহত হয়েছেন।
এর আগে রোববার (১৫ জুন) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের ওসমানীনগর, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জের পৃথক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশীলরা সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিলেটের প্রত্যেকটি সড়কে একই চিত্র দেখা যায়। এখন সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কঠোর নজরদারির। অন্যদিকে বিআরটিএর উচিৎ ফিটনেস ছাড়া গাড়িগুলো যেন রাস্থা থেকে সরিয়ে নেয়া। পাশাপাশি প্রত্যেক চালকের লাইসেন্স আছে কি- না নেই তা যাচাই-বাছাই করা।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ জানান, ‘সিলেটে মূলত সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে অদক্ষ গাড়ি চালক। মহাসড়কে থ্রী-হুইলার যানের চলাচল এবং অটোরিকশা ও টমটমের দৌরাত্বের জন্য দিন দিন রাস্তায় দুর্ঘটনার হার বেড়ে চলেছে। লাইসেন্স বিহীন চালক আর বেপোরোয়া যান চলাচলের জন্য মহাসড়ক ও সড়কগুলিতে দুর্ঘটনায় লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। প্রশাসনের উচিৎ এই ব্যাপারে খুব দ্রুত কার্যকারী প্রদক্ষেপ নেওয়া।’
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন মহাসড়কে গাড়ির কাগজপত্র ও লাইসেন্সের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমরা বেশ কয়েকটি সেমিনার করেছি, সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু মহাসড়কে থ্রী-হুইলারের জন্য বারবার অভিযান দিয়েও তা চলাচল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার