
স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট নগরজুড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। রোববার (২০ জুলাই) থেকে পুরনো বাস-ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মিনিবাসসহ প্রায় আড়াই হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার পরিকল্পনা ছিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি)। তবে কাল হরতালের কারণে এই অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে এসএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ‘কাল হরতালের ঘোষণা এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে অভিযান চালানো সম্ভব নয়। ফলে আপাতত অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে।’ কবে নাগাদ অভিযান শুরু হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযানের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।’
অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে গত বুধবার (১৭ জুলাই) এসএমপি সদর দপ্তরে এক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করা মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের নির্ধারিত ইকোনমিক লাইফ অনুযায়ী মিনিবাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও অন্যান্য মালবাহী মোটরযানের মেয়াদ ২৫ বছর। এর বেশি বয়সের যেকোনো গাড়ি সড়কে চলাচল করলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে।
এসএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান জানান, ‘সিলেট নগরীতে ১,১০০-এরও বেশি বাস রয়েছে যেগুলোর বয়স ২০ বছরের বেশি। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মধ্যে অন্তত ১,২০০টির বেশি যানবাহন রয়েছে যেগুলোর বয়স ২৫ বছরের ওপরে। এসব গাড়ির বিপক্ষে অভিযান চালানোর নির্দেশনা এসেছে কেন্দ্র থেকে।’
তবে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই অভিযানের বিরুদ্ধে অনুরোধ জানিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান বলেন, ‘শুধু বাস-ট্রাক মিলিয়ে প্রায় ২,২০০ যানবাহন রয়েছে যেগুলোর বয়স সীমা পেরিয়ে গেছে। যদি এসব হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সিলেটে গণপরিবহন এবং পণ্য পরিবহন কার্যত থমকে যাবে। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, এমন কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে বিকল্প বা পর্যাপ্ত প্রস্তুতির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হোক।’
বুধবারের সভায় অংশ নিয়েছিলেন বিআরটিএ সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), এসএমপি’র বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, সিএনজি-অটোরিকশা এবং লেগুনা চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। সভায় জানানো হয়, এই অভিযান চালানোর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বন্ধ করা নয়—বরং নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় আড়াই হাজার গাড়ির ভবিষ্যৎ কী হবে? অভিযান বিলম্বিত হওয়ায় মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি থাকলেও, মূলত এই যানবাহনগুলোর ভাগ্য ঝুলে রইল অনিশ্চয়তার দোলনায়। অপরদিকে, অভিযান শুরু হলে তা পরিবহন খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার