Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজাবাসীদের বিমান থেকে ত্রাণ দেওয়ার দাবি ইসরায়েলের

admin

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
গাজাবাসীদের বিমান থেকে ত্রাণ দেওয়ার দাবি ইসরায়েলের

স্টাফ রিপোর্টার:
কয়েক সপ্তাহের আন্তর্জাতিক চাপ ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা গাজা উপত্যকায় ‘সম্প্রতি’ বিমান থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
রোববার (২৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে, বিমান থেকে ফেলা ব্যাগে সাতটি প্যাকেজ ছিল, যার মধ্যে ছিল ময়দা, চিনি ও টিনজাত খাবার।

ইসরায়েল এর আগে বলেছিল, তারা জাতিসংঘের কনভয়কে গাজায় যেতে দিতে একটি মানবিক করিডর খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজায় আরও সাহায্য নিতে দেওয়ার আহবান এবং ব্যাপক অনাহারের সতর্কতার মধ্যে ইসরায়েল এমন কথা বলেছে। দেশটি গাজায় পরিকল্পিত অনাহারের বিষয়টিকে মিথ্যা দাবি করে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কোগাটের নেতৃত্বে বিমান থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বিমান থেকে সাহায্য ফেলা হচ্ছে- এমন ভিডিও তারা শেয়ার করেছে দেশটি। তবে এসব ফুটেজ স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখা যায়নি।ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে শনিবার আইডিএফ বলেছে, গাজায় মানবিক পদক্ষেপের আরও উন্নতির জন্য তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানবিক বিরতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা।

এ ছাড়া গাজায় একটি বিশুদ্ধিকরণ প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগ আবার দেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা। তাদের দাবি, এটি নয় লাখ মানুষের জন্য কাজে লাগবে। গত মার্চ থেকে ইসরায়েল সেখানে সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলো। পরে মে মাসে কিছু বিধিনিষেধসহ তা আবার চালু হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারাও গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফকে সমর্থন দিচ্ছে এবং এই সংস্থাকে গাজায় কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিয়েছে। জিএইচএফ মে মাসে কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর খবর আসছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছে, বেশিরভাগই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে মারা যাচ্ছে। ইসরায়েল বলেছে, তাদের সৈন্যরা সতর্কতামূলক গুলি ছুঁড়েছে। তারা ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে নৈরাজ্যের জন্য হামাসকে দায়ী করেছে।

সাহায্য সংস্থাগুলো ও ইসরায়েলের কিছু সহযোগী দেশকে গাজার ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী করেছে জাতিসংঘ। তারা বাধাহীন ত্রাণ বিতরণের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছে।

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির কারণে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। শনিবার তারা ১২৫ জনের কথা উল্লেখ করেছে যার মধ্যে ৮৫টিই শিশু।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান গাজার সংকটকে ‘মানুষের তৈরি ব্যাপক অনাহার’ বলে বর্ণনা করেছেন। আইডিএফ বলছে, গাজায় খাদ্য বিতরণের দায়িত্ব জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর এবং তাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে হামাসের কাছে কোনো সহায়তা যাচ্ছে না।

শনিবার ইসরায়েলের ছাড়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন যুক্তরাজ্যের সমর্থনে জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আকাশপথে সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সাহায্য সংস্থাগুলো অবশ্য বলছে, এ ধরনের পদক্ষেপ গাজার অনাহার দূরীকরণে সামান্য ভূমিকাই রাখবে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি বলেছেন, আকাশপথে সাহায্য দেওয়া ‘ব্যয়বহুল ও অদক্ষ এবং সঠিকভাবে না করা গেলে এটি এমনকি ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের হত্যারও কারণ হতে পারে’।

ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি বলেন, তার সংস্থার জর্ডান ও মিশরে ৬ হাজার লরি আছে এবং এগুলো গাজায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি অবরোধ প্রত্যাহার, গেট খুলে দেওয়া এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

বিবিসি শনিবার গাজায় অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা বিমান থেকে সাহায্য দিলে ‘মারাত্মক ক্ষতি’ হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গাজার উত্তরের একজন অধিবাসী বিবিসি আরবি বিভাগের মিডল ইস্ট ডেইলিতে বলেছেন, এই প্রক্রিয়াটি ‘অনিরাপদ’ এবং গত বছর একই পদক্ষেপে অনেকগুলো ট্রাজেডির ঘটনা ঘটেছে।

যখন আকাশ থেকে সাহায্য ফেলা হয়, তখন সেগুলো তাঁবুতে পরার ঝুঁকি থাকে, আহত কিংবা মৃত্যুর মতো মারাত্মক ক্ষতিরও সম্ভাবনা তৈরি হয়, বলেছেন তিনি।

এদিকে অনাহারের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিরা এখন ডিহাইড্রেশনের সঙ্গেও লড়াই করছে। একজন মা বিবিসিকে বলেছেন, তিনি ‘কোনো খাবার ও পানীয় ছাড়া, এমনকি পানি ছাড়া বাস করছেন’।

হামাস ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলা করলে বারশ মানুষ মারা যায় এবং তারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। জবাবে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৯ হাজার মানুষ গাজায় মারা গেছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন