Daily Jalalabadi

  সিলেট     রবিবার, ২৭শে জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনাব ড: মোহাম্মদ ইউনুস কি শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক ভাবে ক্ষমতা ত্যাগ করতে পারবেন?

admin

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ০২:২১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ | ০২:২১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
জনাব ড: মোহাম্মদ ইউনুস কি শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক ভাবে ক্ষমতা ত্যাগ করতে পারবেন?

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
সম্মান অর্জনের চেয়ে সম্মান রক্ষা করা বড়ই কঠিন। কথায় আছে, সারাটা জীবন যাহারা সম্মান পান তাহারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় অসম্মানিত বা অপমানিত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। ইসলাম ধর্মে হাসি মুখে কথা বলাকে সমাদৃত করা হয়েছে। ড: ইউনুস তো সবসময় হাসিমুখে কথা বলে থাকেন। তবে তাহার হাসিটা কিন্তু পশ্চিমা অমুসলিমদের হাসি। সেই হাসিটার সাথে বিষবাষ্প প্রবাহমান। পশ্চিমা বিশে^র নেতৃবৃন্দ কথিত জাতিসংঘের মাধ্যমে মুসলিম জাতিকে সুকৌশলে নিষ্পাপ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মুসলিম জাতি সত্ত¡াকে তাহাদের আধুনিক মারনাস্ত্র দিয়ে হত্যা করার অন্যতম মাধ্যম জাতিসংঘ। জাাতিসংঘকে কি দেখেছেন ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন চীনের উইঘুব কাশ্মিরের মুসলমান প্রমুখ রাষ্ট্র সমূহের নিরীহ জনগোষ্ঠিকে রক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহন করতে ? নিরীহ মুসলমানদের পক্ষে কখনও কি শক্তি প্রয়োগ এগিয়ে এসেছে? না, কখনও না। বরং মুসলমান নিধনে শান্তিপূর্ণ দেশকে তাহাদের হীন স্বার্থ বাস্তবায়নে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে অস্থিতিশীল করিতেছে। পশ্চিমা শাষকগোষ্ঠীর একমাত্র জানের শত্রæ মুসলমান। মুসলমান জাতি কিন্তু সহজ সরল। সহজে যেকোন মুনাফিকের কথায় বিশ^াস করে। আর করবেই না কেন? মুসলমান জাতি যাহাতে বিশ^াস করে তা কিন্তু বাস্তবায়ন করে থাকে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী যা বলে তা কিন্তু করে না। মুনাফিকরা যা বলবে তার বিপরীতে কার্যক্রম বা ক্ষতিকর দিক সমূহ বাস্তবায়ন করে থাকে। কথিত নবেল কমিটি কখনও কি মুসলিম দেশ সমূহের আদলে বেড়ে উঠা কাউকে কখনও এ পুরষ্কারে ভ‚ষিত করেছে? না, দেশের বিরুদ্ধে তাহাদের আদলে বেড়ে উঠা ব্যক্তিকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্মানীত করেছে। যেমন, পকিস্তানের ইউসুফ জাই মালালা ও আব্দুস সালাম, ইরানের শিরিন এবাদী, তুরষ্কের আজিজ সানজার, বাংলাদেশের ড: মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ। ড: ইউনুস কি কখনও কাশ্মির, আফগানিস্তান, চীনের উইঘুরের, ইরাকে নির্বিচারে ইসলামী স্থাপনা বা জনগনকে রক্ষা করতে বা রোহিঙ্গা মুসলমান বা বিশে^র নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে কি কখনও শান্তির দূত হিসাবে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছেন? না, কখনও না। ড: ইউনুস সাহেবের ধর্ম বিশ^াস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে? আসলে তিনি কোন ধর্মে বিশ^াসী? মুসলমান ধর্মে বিশ^াসী হলে অবশ্যই বিশে^র নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতেন।
ইসলাম ধর্মে বিশ^াসী হলে প্রতিটি মুসলমানকে ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ব, ইমান, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্জ এই পাঁচটি এবাদত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ফরজ। দৃশ্যমান ফরজ হচ্ছে হজ্জ। ড: ইউনুস সাহেব কি কখনও হজ্জ পালন করেছেন? আমার জানামতে না। তাহার বয়স ৮৬ বছর। দুনিয়াবি সব কিছুর সুযোগ সুবিদা গ্রহনে সিদ্ধ হস্ত। যেমন: মামলা থেকে অব্যাহতি লক্ষ লক্ষ টাকার ট্যাক্স মত্তকুফ, নামে বেনামে নতুন নতুন ব্যবসা ইত্যাদি গ্রহনে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু হজ্জ বা অন্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনে দ্বিধা গ্রস্থ।
২০২৪ সালে বাংলাদেশী জাতি হিসাবে রাষ্ট্রের জনগন তাহাকে সর্বোচ্ছ সম্মানীত করেছেন। প্রধান উপদেষ্ঠা নিয়োগ দিয়েছেন। অথিত ভ‚লে তাহাকে প্রধান উপদেষ্ঠা হিসাবে দল মতের উর্ধে উঠে মেনে নিয়েছেন। অথিত ভ‚লে মানে ১/১১ এর সময় কথিত রাজনৈতিক সংগঠন গঠন করে ক্ষমতাসীন হতে চেয়েছেন। কিন্তু সে মিশন ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ সালে সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করে দেন ছাত্র জনতা। ক্ষমতা গ্রহন করেই ঘোষনা করলেন, তাহাকে ছাত্ররা এ পদে অনুরোধ করে বসিয়েছে। মিথ্যার আশ্রয় নিতে শুরু করলেন। রাজনৈতিক দল বা আমজনতাসহ সকল রাজনৈতিক দল সমূহকে চা চক্রের আমন্ত্রন জানান। চা চক্র ও তাহাদের মতামত শুনে পশ্চিমা ধাচের মুচকি হেসে সকলকে বিদায় দিলেন। নিজে কিন্তু কিছুই বললেন না। আগত রাজনীতিবিদদের কোন কথার গুরুত্ব দিলেন না। জাতিকে দেখালেন আমার সাথে তো নিয়মিত রাজনৈতিক দলসমূহ সহযোগীতা করিতেছেন। ড: ইউনুস সম্পর্কে তাহার ছাত্র বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ঢাকসুর সাবেক ভিপি, বিশিষ্ট লেখক, কলামিষ্ট, নির্লোভ, নির অহংকারী বহুগুনে গুনান্বীত জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সহজ সরল রাজনীতিবিদদের সকল কথা শুনেন, মুচকি হাসেন কিন্তু আগত অথিতি বা রাজনীতিবিদদের কথা কিছুই মানেন না। তবে ড: ইউনুস সাহেবের জেনে রাখা ভাল। কোন কুট কৌশলই শেষ পর্যন্ত ভাল ফলাফল দেয় না। অথিত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে ভাল কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগনের মাঝে আমৃত্যু সম্মানীত হয়ে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। যেমনটি থেকেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও ৩ জোটের মনোনীত ব্যক্তি অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা জনাব মরহুম সাহাব উদ্দিন আহমদ ও তাহার সহকর্মীরা। ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বজন গ্রহন যোগ্য নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিরল সম্মানের অধিকারী হয়ে আছেন, থাকবেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার তথা জনগনের টাকার কোন ভোগ বিলাশ করেননি। করতে পারতেন, কিন্তু করেননি। নিজে ক্ষমতায় থেকে নিজের স্বার্থে একটি টাকা ও খরচ করেননি। পরিবারের লোকজন বা নিজে বিনা প্রয়োজনে বঙ্গভবন বা অন্য কোন অহেতুকভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা ছয় নয় করেননি।
কথিত সংস্কারের নামে বিভিন্ন কমিটি করে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করিতেছেন, যাহা অপ্রয়োজনীয়। ১৯৯০ সালের অভিজ্ঞতার আলোকে একই মঞ্চে সকল রাজনৈতিক দল, ষ্ঠেক হোল্ডার বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের ডেকে নুন্যতম ঐক্যের ভিত্তিতে জনগনের ক্ষমতা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিয়ে আপনার ঘোষনা মত স্বপদে ফিরে যাওয়া উত্তম। কিন্তু সেটা না করে অহেতুক বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির কুটকৌশল হাতে নিয়েছেন। যা কখনও বাস্তবায়ন সম্ভব নহে। রাষ্ট্রের জনগনকে বোকা ভাবেন না। তাহারা কিন্তু অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আপনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করিতেছে। স্মরন রাখা ভাল রাজনীতিবিদ হওয়া বড়ই কঠিন।
বলে রাখা ভাল, পূর্বের দলসমুহের নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের শতকরা হিসাব মূল্যায়ন করে এগিয়ে যাওয়ার উচিত। কোন রাজনৈতিকদল ০%, ১%, ২%, ৭%, ৩৬% ও ৩৮% ভোটের অংশিজন। এখন যদি আপনি ৩৬% + অদৃশ্য ৩৬% = ৭২% প্রতিনিধিত্বকারী দল সাথে ১% প্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের অংশিজনকে এক মঞ্চে তুলে রাজনৈতিক ঐক্যমত করতে চান, তাহলে কি ঐক্য সম্ভ্যব? কোনদল যদি আপনার ডাকে তাহারা সাড়া না দেয় তাহলে কি ঐক্য সম্ভব? কোন অবস্থাতেই দলগত সংখ্যার ভিত্তিতে হিসাব না করে ৭২% বা এর নিকটতম হিস্যা বা পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দিয়ে মিমাংসায় এগিয়ে আসুন। নতুবা আপনি ব্যার্থ হতে বাদ্য। কথিত শিক্ষার্থীরা এই ৭২% এর মধ্যে সময়মত চলে যাবে তাহাদের বৈধ অবিভাবকদের ডাকে।
কিন্তু নভেল বা অন্য কোন পুরস্কার পাওয়া অত্যন্ত সহজ। কতিপয় ব্যক্তি ও তাহাদের সংগঠনের আদর্শের সাথে মিল থাকলে এসব পদক কোন ব্যাপারই না। ইদানিং কালে ডক্টর বা ডাক্তারের সংখ্যা অগনিত। প্রবাদ আছে টাকা থাকলে এসব পদক কেনা যায়। ডাক্তার বা ডক্টর একজন মানুষের ক্ষতি করে ভ‚য়া চিকিৎসা বা পরামর্শ দিয়ে। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদের একটি বেফার্স কথার কারনে কোট কোটি নেতা কর্মীদের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যেমন: ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার একটি কথার কারনে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে। আরেকটা কথার কারনে, ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ী টিকে ধ্বংশ করা হয়েছে। সুতরাং সাধু সাবধান।
লেখক: সভাপতি: সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল: ০১৮১৯১৭৬২১৭।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন