
স্টাফ রিপোর্টার:
গেল বছর ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সিলেট জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে ১৩৬টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি হত্যা ও ১২০ বিস্ফোরক ও হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। যার মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন মাত্র ৩শ জন।
মামলাগুলোর মধ্যে এজাহার নামীয় ২ হাজার ৩২১ জন এবং অজ্ঞাত ৭ হাজার ১৮৫ জন আসামী রয়েছেন। বিপরীতে ১০২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন ৫টি মামলার বাদি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে (এসএমপি) দায়েরকৃত ৯২ মামলায় মোট আসামি ২০ হাজার ২২২ জন। এরমধ্যে এজাহার নামীয় ৬ হাজার ৪৮২ জন এবং অজ্ঞাত ১৩ হাজার ৭৪০ জন। এতে ১৭৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৬টি হত্যা মামলার মধ্যে শীর্ষ অভিযুক্ত সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে গোলাপগঞ্জে ৭টি ও বিয়ানীবাজার থানায় ২টি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জেলা ও মহানগর এলাকায় দায়ের করা সর্বাধিক ৪৩টি বিস্ফোরক মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম। ৩টি হত্যা মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হত্যা মামলায় দ্বিতীয় অবস্থানে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। তার বিরুদ্ধে ৮টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ৩৬টি মামলা রয়েছে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব। তিনি ৭টি হত্যা মামলাসহ অসংখ্য বিস্ফোরক মামলা আসামি।
বিস্ফোরক মামলায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ২টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ৪১টি মামলা হয়েছে।
এছাড়া হত্যা মামলায় যৌথভাবে ৪র্থ স্থানে আছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম রাবেল, উপজেলা ফুলবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ খান ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী আকবর ফখর। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৬টি করে হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।
এছাড়াও ২৬টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলা নিয়ে ৪র্থ স্থানে আছেন সিসিকের ৩২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ। ধারাবাহিক মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিক ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব আহমদ খানের বিরুদ্ধে ২৫টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি পিযুষ কান্তি দে’র বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে ২৫টি মামলা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটুর বিরুদ্ধে ২৪টি, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান যুক্তির বিরুদ্ধে ২২টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা, সিলেট ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ২০টি বিস্ফোরক ও ৩টি হত্যা, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বিরুদ্ধে ১৮টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন।
গত এক বছরে গ্রেফতার মাত্র ৩শ। গত এক বছরে মামলার তদন্তেও নেই তেমন কোনো অগ্রগতি। সঙ্গত কারণেই তদন্তের মন্থর গতি নিয়ে অনেকটা হতাশ শহীদ পরিবারসহ বাদিপক্ষ। শুধু তারা নন, আইনবিদরাও উদ্বিগ্ন তদন্ত নিয়ে।
সিলেটে শহীদ সাংবাদিক আবু তুরাবের বড় ভাই আবুল আহছান মোহাম্মদ আজরফ হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা হতাশ। এসএমপি থেকে পিবিআই, সেখান থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন তদন্তাধীন। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন পেশাদার সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার ঘটনার তদন্ত এখনো অনেক দূর।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম, পিপিএম-সেবা বলেন, অনেকগুলো মামলা, সব মামলারই তদন্ত চলছে। পুলিশের সর্ব্বোচ্চ মহল থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। তবে লাশের ময়না তদন্ত না হওয়াসহ কিছু বিষয় সঙ্গত কারণেই তদন্তে কিছুটা স্থবিরতা আনছে। সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলা পিবিআইয়ের হাত ধরে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আরোও কটি মামলার তদন্ত বেশ এগিয়েছে। তদন্তে মামলার অভিযোগের সত্যতা যাচাই, সত্যের সাথে মিথ্যের মিশেলে নিরীহ-নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার