Daily Jalalabadi

  সিলেট     সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৭শে শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ানীবাজারে বিনামূল্যে ওষুধ নিতে ১৬ হাজার কার্ডধারী, সংকটে অচলাবস্থা

admin

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫ | ০৬:৪৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৫ | ০৬:৪৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিয়ানীবাজারে বিনামূল্যে ওষুধ নিতে ১৬ হাজার কার্ডধারী, সংকটে অচলাবস্থা

বিয়ানীবাজার সংবাদদাতা:
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি ও অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমাতে সরকারের অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচি। এর অধীনে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের জনসাধারণকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বিষয়ক বিভিন্ন জরুরি সেবা দেওয়া হয়। তবে এখানকার অতিরিক্ত সেবা আগ্রহীর কারণে এনসিডি কর্নারের কার্যক্রমে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে প্রায় ১৬ হাজার কার্ডধারী এনসিডি কর্নারের সেবা গ্রহণ করছেন। ফলে প্রতি মাসেই ওষুধের বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে।

দেশের অন্যান্য উপজেলায় ২০১৮সালে চালু হলেও ধারাবাহিকভাবে বিয়ানীবাজারে এ কার্যক্রম শুরু হয় অনেক দেরীতে। ২০২১ সালের অক্টোবরে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নার চালু করা হয়। এতে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস শনাক্ত, চিকিৎসা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ বিতরণ ও রোগীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। রোগীদের নিবন্ধন করে নিয়মিত ফলোআপ করা শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। এনএইচএফবি, জাইকা, আইসিডিডিআরবি, ব্র্যাক হেলথসহ আটটি প্রতিষ্ঠান এই কর্নার স্থাপনে সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে।

জানা যায়, নিবন্ধিত রোগীদের চিকিৎসা, ফলোআপ এবং ওষুধ পাওয়ার জন্য একটি ‘সবুজ বই’ দেওয়া হয়, যা ছাপার কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া রোগীদের অনেকের বাড়ি প্রতিবেশী বড়লেখা ও জকিগঞ্জ উপজেলায়। যারা বিয়ানীবাজারে অস্থায়ীভাবে থাকেন মর্মে নিবন্ধন করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, এনসিডি কর্নারে মূলত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মেটফরমিন ও গিøক্লাজাইড, উচ্চ রক্তচাপের জন্য অ্যামলোডিপিন, লোজারটেন পটাশিয়াম, হাইড্রোক্লোরোথায়াজাইড ইত্যাদি ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া হৃদ্রোগীরা পান অ্যাসপিরিন ও রোজুভাসটেটিন। গত কয়েকমাস থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব ওষুধের সংকট দেখা দিচ্ছে। চাহিদার তুলনায় কম ওষুধ সরবরাহের কারণে এ সংকট।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, ‘এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো যাচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্রদের। তবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অনেকেও এই সেবা নিচ্ছেন। এতে প্রান্তিক মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ’বই বিতরণ, যন্ত্রাংশ, ওষুধের সংকট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন এনসিডির কাজ থেমে না যায়।’

সরকারের সর্বশেষ স্বাস্থ্য বুলেটিন বলছে, দেশে সংক্রামক রোগের প্রকোপ ধীরে ধীরে কমলেও উল্টো অসংক্রামক রোগের চিত্র। মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে। যার ৩৪ ভাগই ঘটে হৃদরোগে। এ হৃদরোগের বড় কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস। তথ্যমতে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদ্রোগ, কিডনি, স্নায়বিক সমস্যা, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ। ডায়াবেটিসে অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদ্রোগ। এই ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপের কারণে আরও বেড়ে যায়।

ওষুধ সরবরাহ হওয়ার পর বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রæত তা শেষ হয়ে যায়। এতে কার্ডধারী ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা পর্যাপ্ত ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে গিয়ে নি¤œ আয়ের রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, আগে এনসিডি কর্নারের এসব ওষুধ কেন্দ্রীয়ভাবে দেওয়া হতো, এখন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনই কিনবেÑএমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন