Daily Jalalabadi

  সিলেট     বুধবার, ২৭শে আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উপকূলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা নৌযান ও ড্রোন মোতায়েন ভেনেজুয়েলার

admin

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫ | ০২:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৫ | ০২:১৩ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
উপকূলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা নৌযান ও ড্রোন মোতায়েন ভেনেজুয়েলার

নিউজ ডেস্ক:
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, এ পদক্ষেপ মাদক পাচার মোকাবিলার জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভেনেজুয়েলা উপকূলীয় অঞ্চলে সামরিক নৌযান ও ড্রোন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। খবর আলজাজিরার।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাডরিনো জানান, দেশটির ক্যারিবিয়ান উপকূলে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ ড্রোন ও নৌ টহল মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাদের আঞ্চলিক জলসীমার উত্তরে আরও বড় আকারের নৌযানও পাঠানো হবে।

এর আগে, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন মাদক চক্রবিরোধী অভিযানের কথা বলে ভেনেজুয়েলার উপকূলের দিকে তিনটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো সোমবার জানায়, আরও দুটি মার্কিন নৌযান — একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজার ও একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত ফাস্ট-অ্যাটাক সাবমেরিন — ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। এই অভিযানে প্রায় ৪,৫০০ মার্কিন সেনা অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে ২,২০০ মেরিন রয়েছে।

এ মোতায়েনের পেছনে মূল প্রেক্ষাপট হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ। গত সপ্তাহে তারা ভেনেজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে কোকেন পাচার এবং আন্তর্জাতিক মাদক কার্টেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। একই সঙ্গে মাদুরোর মাথার দাম ২৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার করা হয়। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলোর গ্রেপ্তারের জন্যও ২৫ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মাদুরো এবং তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা ‘কার্টেল দে লস সোলেস’ নামের কোকেন পাচারকারী একটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যাকে ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে মাদুরো এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র করছে।

নিজের সাপ্তাহিক টেলিভিশন ভাষণে মাদুরো বলেন, ভেনেজুয়েলা প্রতিবেশী কলম্বিয়ার মতো কোকেন উৎপাদন বা কোকা পাতা চাষে জড়িত নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই মাদকের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে, অথচ তারা সে সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ। এ প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে মাদুরো লক্ষাধিক স্থানীয় মিলিশিয়াকে সংগঠিত করেছেন এবং প্রায় ১৫ হাজার সেনাকে কলম্বিয়া সীমান্তে মোতায়েন করেছেন, যাতে মাদক চক্র ও অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

মঙ্গলবার এক পৃথক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাডরিনো জানান, ভেনেজুয়েলার উত্তর-পূর্ব উপকূলে একটি অভিযানে কয়েকটি জাহাজ নির্মাণশালা ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে অপরাধীরা মাদক পরিবহনের জন্য আধা-ডুবোজাহাজ এবং বিশেষ নৌকা তৈরির চেষ্টা করছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর ঘটনাটি ঘটল এমন সময়ে, যখন ট্রাম্প মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। অন্যদিকে, জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার স্থায়ী মিশন এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি এবং পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন প্রকাশ্য ভীতি প্রদর্শনের সমান।

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আপাতত সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ বা মার্কিন আগ্রাসনের সম্ভাবনা কম। অনেক ভেনেজুয়েলান নাগরিকও এটিকে কেবল রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হিসেবে দেখছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ফিল গানসন এএফপিকে বলেন, ‘আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাদুরোর সরকারের মধ্যে চাপ তৈরি করা এবং তাকে কোনো একটি আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার

শেয়ার করুন