আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি ফৌজদারি অভিযোগ গঠন করেছে। ট্রাম্পকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তার ম্যানহাটনের ফৌজদারি আদালতে হাজির হওয়ার কথা। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। ট্রাম্পের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্কে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের হাজিরাকে কেন্দ্র করে আজ কী ঘটতে পারে তা জানতে মার্কিনিদের মতো বিভিন্ন দেশের উৎসুক মানুষ অপেক্ষায় আছে।
সোমবারই ফ্লোরিডা থেকে নিউ ইয়র্কে
স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে ট্রাম্পের ফ্লোরিডা ত্যাগ করার কথা। তিনি নিউ ইয়র্কের লাগরদিয়া বিমানবন্দরে বেলা ৩টায় অবতরণ করবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সোমবার রাতে তিনি ট্রাম্প টাওয়ারে কাটাবেন। এরপর আজ দুপুরে আদালতে হাজিরা দিয়ে আবার ফ্লোরিডা ফিরে যাবেন। সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের হাজিরা উপলক্ষ্যে আজকে ম্যানহাটন আদালতের অন্যসব বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। সিক্রেট সার্ভিস, নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এবং আদালতের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করছে।
মুখচ্ছবি নয়, ট্রাম্পের ফিংগারপ্রিন্ট নেওয়া হবে
আদালতে আসার পর ট্রাম্পের ফিংগারপ্রিন্ট নেওয়া হবে। সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তির মুখচ্ছবি নেওয়া হয়। তবে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে সেটি ঘটবে না। কারণ ট্রাম্পের হাজিরাটি সম্পর্কে সবাই জানে। আবার আশঙ্কা আছে, তার ছবি কোনোভাবে প্রকাশ হয়ে গেলে তা আইনের লঙ্ঘন ঘটাবে। সাধারণত অপরাধীর হাজিরার আগে তাকে গ্রেফতার করে আদালত কক্ষের পাশে একটি সেলে রাখা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা ঘটবে না। তাকে হলওয়ে এবং লিফটের পিছনের সেটের মধ্য দিয়ে সেই মেঝেতে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে আদালত কক্ষ অবস্থিত। তারপর তিনি পাবলিক হলওয়ে দিয়ে হেঁটে আদালতের কক্ষে যাবেন।
হ্যান্ডকাফ পরানো হবে না
সুরক্ষার জন্য ট্রাম্পের চারপাশে সিক্রেট সার্ভিস এবং ফেডারেল এজেন্টরা থাকবেন। তাই ট্রাম্পকে হ্যান্ডকাফ পরানো হবে না। ট্রাম্পের আইনজীবী জো ট্যাকোপিনা জানিয়েছেন, ‘এটা একেবারেই ভিন্ন। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্টের আদালতে হাজিরা। আমি অন্তত এমন হাজিরা ম্যানহাটনের আদালতে দেখিনি।’ আইনজীবী জানান, ট্রাম্প খুব জোরেশোরে এবং গর্বের সঙ্গে বলবেন যে তিনি এই মামলায় নির্দোষ।
ট্রাম্পকে গ্রেফতার নয়, জেলেও যাবেন না
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আইনের অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাচেনের মতে, অভিযুক্ত হলেই ট্রাম্পকে জেলে যেতে হবে না। কারণ জেলে যেতে হয় তাকে যিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং যার সাজা হয়। আবার ট্রাম্প জেলে গেলে তার দুই পাশে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অর্থাৎ সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যদেরও জেলের সেলে থাকতে হবে এবং তাদের কারাগারের পোশাক পরতে হবে। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট জেলে গেলেও তার সুরক্ষার দায়িত্ব সিক্রেট সার্ভিসের। উল্লেখ্য, এর আগে দোষী সাব্যস্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জেলে যেতে হয়নি।
আজ বিকালে ট্রাম্পকে আদালতকক্ষে আনা হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রকাশ করা হবে। অর্থাৎ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হবেন। ট্রাম্পকে তার জিম্মায়ই মুক্তি দেওয়া হবে। তবে তার ভ্রমণের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হতে পারে। মুক্তির পর সাধারণত আসামি সামনের দরজা দিয়ে বের হন। কিন্তু ট্রাম্পকে সেই হলওয়ে এবং লিফটের পিছনের সেটের মধ্য দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে বের করবে সিক্রেট সার্ভিস। এরপর ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সেখানে সন্ধ্যায় তার একটি জনসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার কথা।
সরাসরি সম্প্রচারিত হবে?
সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নিউ ইয়র্ক বিচারকের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রকাশ করা এবং তার হাজিরা সরাসরি সম্প্রচারের আবেদন করেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো সীমিত কিছুসংখ্যক ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার এবং রেডিও সাংবাদিকের অবস্থানের অনুমোদন চেয়েছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্পের হাজিরায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না বলে আবেদনের চিঠিতে জানানো হয়েছে। তবে এই আবেদনের জবাব গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। নিউ ইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি জুয়ান মার্চান ট্রাম্পের মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। ট্রাম্পের আইনজীবীরা তাকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব যুক্তি দেবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ট্যাকোপিনা।
ভোটে দাঁড়াতে পারবেন ট্রাম্প
সিএনএনের রাজনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক জাচারি বি উলফ জানিয়েছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত কেন, দোষী সাব্যস্ত হলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাচেনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, কোনো বাধাই ট্রাম্পকে প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবে না। মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্রের জন্মগত নাগরিক, ৩৫ বছর বয়স এবং যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করতে হবে। যদিও রাজনৈতিকভাবে এক জন অভিযুক্তের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া কিংবা জয়ী হয়ে আসা খুবই কঠিন।
নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভের আশঙ্কা, প্রস্তুত পুলিশ
নিউ ইয়র্কের ইয়াং রিপাবলিকান ক্লাব বলেছে, আদালতমুখী সড়কের বিপরীত পাশে থাকা একটি পার্কে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কংগ্রেসে ট্রাম্পের দৃঢ় সমর্থক গ্রিন বলেছেন, তিনি ঐ বিক্ষোভে অংশ নেবেন। এক টুইটার পোস্টে গ্রিন বলেন, বিক্ষোভ সাংবিধানিক অধিকার। ট্রাম্প সমর্থকদের অনেকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, বিক্ষোভ করতে গিয়ে তারা গ্রেফতারের শিকার হতে পারেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নিতে তারা প্রস্তুত আছে। সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকারের চর্চা করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সম্ভাব্য বিক্ষোভ ঠেকাতে তারা ম্যানহাটনে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সদর দপ্তর ট্রাম্প টাওয়ারের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করেছে। ম্যানহাটনের ফৌজদারি আদালতের কাছের সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই সংবাদটি পড়া হয়েছে : 1K বার